দেশীয় শোবিজের জনপ্রিয় একটি নাম। টনি ডায়েস।একসময় রুচিশীল ও মার্জিত অভিনয়শৈলী দিয়ে দর্শক মন জয় করেছেন নিয়মিত। তবে এ মুহূর্তে পর্দায় নেই তিনি। ক্যামেরার সামনেও নেই। থাকবেনই বা কি করে। কারণ পরিবার নিয়ে আমেরিকায় পাড়ি দিয়েছেন সেই কবে। ২০০৯ সালে স্ত্রী প্রিয়া ডায়েস ও একমাত্র মেয়ে অহনাকে নিয়ে আমেরিকায় চলে যান টনি ডায়েস। তখন থেকেই মার্কিন মুলুকে স্থায়ীভাবে থাকছেন তিনি। পরিবার নিয়ে দেশ ছেড়ে কেমন আছেন এ মানুষটি ? কেমনই বা চলছে তার সবকিছু? সম্প্রতি মুঠোফোনে মানবজমিনের সঙ্গে সেসব নিয়ে কথা হয় টনি ডায়েসের। তিনি বলেন, এখানে বেশ ভালো আছি। একদম নিশ্চিন্তে আছি। কোনো আতঙ্ক নেই, লোডশেডিং, পানির সংকট কিংবা ট্রাফিক জ্যাম-এসবও নেই। সবমিলিয়ে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে আমি খুবই ভালো আছি। যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার পর থেকে আমেরিকান হোন্ডা নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করছেন টনি ডায়েস। বর্তমানে  সেখানে তিনি ম্যানেজমেন্টের দায়িত্ব পালন করছেন। দীর্ঘদিন ধরেই পর্দায় নেই এ অভিনেতা। তবে পুরনো সহকর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগের সূত্রে খোঁজ নিতে পারেন দেশের শোবিজের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে। তার সমসাময়িক অনেকেই এখনও মিডিয়াতে কাজ করছেন। পর্দায় সরব আছেন। মাঝে মধ্যে সময় পেলে তাদের অভিনীত নাটকগুলো দেখারও চেষ্টা করেন টনি ডায়েস। তখন কি বন্ধুদের মিস করেন তিনি? নিজেরও কি ইচ্ছে করে আবার লাইট  ক্যামেরা অ্যাকশনের মাঝে ফিরে আসতে? এ প্রসঙ্গে টনি ডায়েস বলেন, অভিনয়টা তো রক্তের সঙ্গে মিশে আছে। কিন্তু ফিরতে চাইলেও ফেরা হবে না। আর মিস করার কথা বলছেন? আগেই একটু বলে রাখি। আমি সবসময়ই যেকোনো কিছু নিয়ে গবেষণা করি। আমার সে গবেষণায় আগামী পাঁচ বছর পর কি হবে তা থাকে। আমি মনে করি পাঁচ বছর পর আমার অবস্থান কি হবে। বাংলাদেশের শোবিজ অঙ্গনে একজন ভালো পারফরমার খুব তাড়াতাড়ি জায়গাটি ধরতে পারে। জনপ্রিয়তাও অর্জন করে। কিন্তু পাঁচবছর পর ওই শিল্পীর অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয় না। একই রকম থেকে যায়। আমি এখন কাজ করি না। কিন্তু মিডিয়ার অনেকের সঙ্গেই যোগাযোগ আছে। দেখছি তো। তাদের আগে যেমন ছিল এখনও তা-ই। কোনো পরিবর্তন আসে নি। তখন মনে হয়, আমি ওই জায়গাটি কিংবা মানুষগুলোকে মিস করি, কিন্তু খুব মিস কি করতে পারছি? প্রশ্নটা আমি নিজেই নিজেকে করি। মিডিয়া থেকে এখন দূরে থাকলেও সময় পেলে টুকটাক নাটক দেখেন টনি ডায়েস। আগের চেয়ে অনেক পরিবর্তন লক্ষ্যও করেছেন তিনি। এ প্রসঙ্গে বলেন, দেশের নাটকে অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়েছে। তবে আমার কাছে যেটা বেশি লক্ষ্যণীয় তা হলো- কারিগরি দিক। টেকনিক্যালি আমাদের নাটকের মান অনেক এগিয়ে গেছে। তবে একটা ব্যাপার শুনে খুব হতাশ হই। এখন নাকি শুটিং সেটে গিয়ে স্ক্রীপ্ট পায় শিল্পীরা। কোনো রিহার্স্যাল ছাড়াই শুটিং শুরু হয়। বিষয়টি আমাকে অবাক করে। সম্প্রতি টনি ডায়েস অভিনীত চলচ্চিত্র ‘পৌষ মাসের পিরিতি’ দেশের পাশাপাশি আমেরিকাতেও মুক্তি পেয়েছে। গত ৯ই অক্টোবর ড্রামা সার্কেল-এর আয়োজনে নিউইয়র্কের জ্যামাইকা মাল্টিপ্লেক্স সিনেমাসে চলচ্চিত্রটির প্রিমিয়ার হয়। আর ডালাসে শিকাগো বায়োস্কোপ এবং বাংলা গ্রুপ আয়োজিত শো হবে ১৬ই অক্টোবর বিকেল ৩টায় রিচার্ডসন শহরের ফান এশিয়ানা থিয়েটারে। এ প্রসঙ্গে টনি ডায়েস বলেন, আমার খুব ভালো লাগলো যে, ‘পৌষ মাসের পিরিত’ চলচ্চিত্রটি যুক্তরাষ্ট্রে প্রিমিয়ার হলো। নিউইয়র্ক এখন আমার কাছে ঢাকা শহরের মতো মনে হয়। প্রচুর বাংলাদেশির বসবাস। বিশেষ করে জ্যাকসন হাইটস, জ্যামাইকা, এস্টোরিয়া, এহলমার্টস, ওজন পার্ক, ব্রুকলিন এসব এলাকাগুলোতে প্রচুর বাংলাদেশি থাকেন। আমরা সবাই কিন্তু এখানকার বড় বড় থিয়েটারে গিয়ে প্রায় হিন্দি অথবা ইংরেজি ছবি দেখছি। কিন্তু আমরা তো কেউ এখানে বাংলাদেশের ছবি দেখার সুযোগ পাচ্ছি না। শুধু আমাদের চলচ্চিত্রকে দোষারোপ করে যাচ্ছি যে, আমাদের ছবি ভালো হচ্ছে না। আমি বরাবরই এক্সপোর্টের কথা ভাবি। আমাদের দেশের সংস্কৃতি যদি এদেশে আনা যায় তাহলে অনেক এগিয়ে যাবে। এই যেমন ‘পৌষ মাসের পিরিতি’ ছবিটির প্রিমিয়ারের সময় এখানকার অসংখ্য বাঙালী ছেলে, মেয়ে কাছে এসে প্রশংসা করেছে। তারা চায় বাংলাদেশের অন্য ছবিগুলোও আমেরিকায় আসুক। প্রযোজকরা বিষয়টি নিয়ে ভাববেন এমন প্রত্যাশাই করছি। আমিও আমার জায়গা থেকে পর্যাপ্ত সহযোগিতা করবো। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক টেলিছবিতে অভিনয় করেছেন টনি ডায়েস। সর্বশেষ ২০১২ সালে ধারাবাহিক নাটক ‘ছায়াবৃতা’তে দেখা গেছে তাকে। নিউ ইয়র্ক প্রবাসী বাঙালিদের নিয়ে লেখা সমরেশ মজুমদারের উপন্যাস থেকে এর নাট্যরূপ দিয়েছিলেন শফিকুর রহমান। নাটকটি পরিচালনা করেছিলেন তৌকীর আহমেদ। ১৯৯৪ সাল থেকে চারশরও বেশি  নাটক, সিরিয়াল আর টেলিফিল্মে কাজ করেছেন টনি ডায়েস।

Share Now
December 2024
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031