প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার পথে চীনকে বিশ্বস্ত অংশীদার বলে অভিহিত করেছেন । চীনের জাতীয় স্বার্থ, অঞ্চলগত অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্বে নেওয়া বেইজিংয়ের উদ্যোগগুলোয় বাংলাদেশের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে তিনি বলেন, শি জিনপিংয়ের বাংলাদেশ সফরে দুই দেশের বাণিজ্য, বিনিয়োগসহ অন্যান্য খাতে ‘নিবিড় সহযোগিতার নতুন যুগ’ শুরু হবে। মঙ্গলবার চীনের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সিনহুয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের স্থিতিশীল উন্নয়নে চীনের ভূমিকার কথা স্মরণ করে টেক্সটাইল লেদার পেট্রো কেমিকেল, ফার্মাসিউটিক্যাল, এগ্রো-প্রসেসিংসহ বিভিন্ন খাতে চীনকে বিনোয়োগের আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে সিনহুয়াকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা অত্যন্ত আনন্দিত ও গর্বিত যে চীনের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশ সফরে আসছেন। আমি বিশ্বাস করি, প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের এই সফর দক্ষিণ এশিয়ার জন্যও গুরুত্ব বহন করবে।’
শেখ হাসিনার বরাত দিয়ে সিনহুয়া জানায়, এমন এক ঐতিহাসিক সময়ে চীনের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশ সফর করছেন যখন বাংলাদেশ বিনিয়োগ, শিল্পায়ন, পরিবেশগত ভারসাম্য এবং সমৃদ্ধির এক নতুন পথে অগ্রসর হচ্ছে। শেখ হাসিনা বলেন, ‘চীন আমাদের সবচেয়ে বড় ব্যবসায়িক অংশীদারে পরিণত হয়েছে। আমাদের অগ্রযাত্রার পথে চীনকে আমরা বিশ্বস্ত অংশীদার বিবেচনা করি। বিনিয়োগ, মূলধন আর প্রযুক্তি খাতের মতো বিভিন্ন বড় বড় প্রকল্পে চীন নেতৃস্থানীয় ভূমিকায় রয়েছে।’
বাংলাদেশ ও চীনের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নিয়ে বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘দুই দেশের সম্পর্ক নির্ধারণের ভিত্তি হলো শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের ৫টি মূলনীতির পাশাপাশি প্রতিবেশীসুলভ সহৃদয় দৃষ্টিভঙ্গি, পারস্পরিক আস্থা এবং পারস্পরিক অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এক চীননীতি সমর্থন করে।’
বাংলাদেশ ও চীনের পারস্পরিক সম্পর্ক সর্বোচ্চ শিখরে নিতে সম্ভাব্য সব খাতে পারস্পরিক সহযোগিতার কথা জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘চীনা প্রধানমন্ত্রীর সফরের মধ্য দিয়ে দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নেওয়ার পরিকল্পনা করছি আমরা।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অতীতের দশকগুলোতেই চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ক পোক্ত হয়েছে। তবে অবকাঠামো উন্নয়ন, তথ্যপ্রযুক্তি ও কৃষিপ্রযুক্তির মতো খাতগুলোতে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির সুযোগ রয়েছে।’
চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড নীতির প্রশংসা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির কেন্দ্রকে তিনি দক্ষিণ গোটা অঞ্চলের সঙ্গে যুক্ত করতে চান। দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়ার মধ্যে অর্থনৈতিক নৈকট্য তৈরি করতে চান।’
স্থিতিশীল উন্নয়ন নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের নেওয়া পদক্ষেপগুলোতে চীনের অংশীদারী সমর্থনের কথা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। চীনা বিনিয়োগকারীদের তিনি টেক্সটাইল লেদার পেট্রো কেমিক্যাল, ফার্মাসিউটিক্যাল, এগ্রো-প্রসেসিংসহ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগের আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চট্টগ্রামে একটি এক্সক্লুসিভ অর্থনৈতিক ও শিল্প জোন গড়ে তোলার শেষ প্রান্তে অবস্থান করছি, যা আমাদের পারস্পরিক অর্থনীতি-বিনিয়োগ-বাণিজ্য সহযোগিতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।’ ওই অর্থনৈতিক ও শিল্পজোনে উদ্যোক্তা অথবা ব্যক্তি-বিনিয়োগের জন্য চীনের প্রতি আহ্বান জানান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং শুক্রবার বাংলাদেশ সফরে আসছেন। পরদিন সকালে তিনি ঢাকা থেকে ভারতের গোয়ায় যাবেন। চীনের প্রেসিডেন্টের সফরের সময় বাংলাদেশ ও চীন ২৫টির মতো চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সইয়ের জন্য চূড়ান্ত করেছে। সূত্র: সিনহুয়া