মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি খাবার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান সততার পুরস্কার হিসেবে এক বছরের জন্য খাবার ফ্রি করে দিলো । যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার বাসিন্দা সেলেনা আভালোস ডমিনো’জ নামের একটি খাবার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে অর্ডার দিয়েছিলেন পিৎজার। অর্ডার অনুযায়ী বাক্স এসে হাজির। ডেলিভারি বয় চলে যাওয়ার পর বাক্সটি খুলতেই হতবাক সেলেনা। ভেতরে টাকার বান্ডিল। দু’পাঁচশো নয়, একেবারে ৫ হাজার মার্কিন ডলার (যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩ লাখ ৯০ হাজার টাকা)।
তবে এ ঘটনায় সেলেনা যা করেছে, তা অবশ্যই আমাদের কাছে শিক্ষণীয়। তিনি সঙ্গে সঙ্গে ফোন করেন ডমিনো’জ-এ। সেলেনার ফোন পেয়ে এক ডেলিভারি বয় এসে টাকা সমেত প্যাকেটটি নিয়ে যান। সেলেনার এমন সততার পুরস্কার বাবদ তাকে এক বছরের জন্য ফ্রি পরিষেবা দেবে সংস্থাটি। অর্থাৎ, এক বছর ডমিনো’জ-এ যা অর্ডার করবেন, সবই বিনামূল্যে পাবেন সেলেনা।
এ ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই দুবাইয়ে প্যাসেঞ্জারের ফেলে যাওয়া সাত কোটি টাকার সোনা পেয়েও ফিরিয়ে দিলেন এক বাংলাদেশি ট্যাক্সিক্যাব ড্রাইভার। আমিরাতের স্থানীয় মুদ্রায় সোনার বারগুলোর দাম কমপক্ষে ৩৫ লাখ দিরহাম। বাংলাদেশি টাকায় সাত কোটিরও বেশি।
এত টাকার সোনা দেখেও সততা টলেনি লিটনের। যথারীতি রেডিওতে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের হাতে সোনার বারগুলো তুলে দিয়ে আসেন লিটন। ক্যাব ড্রাইভার লিটন চন্দ্র নাথ পালের এই সততায় মুগ্ধ সেদেশের কর্তৃপক্ষ। সেদেশের সংবাদমাধ্যমেও বিষয়টি ব্যাপক আলোড়ন তুলেছে। তাকেও পুরস্কৃত করা হয়েছে। এ ঘটনার আলোচনা দুবাইয়ের মানুষের মুখে মুখে।
উল্লেখিত ঘটনায় লিটন চন্দ্র পাল ও সেলেনার সততা অবশ্যই প্রশংসাযোগ্য। আসলে সততা মানব চরিত্রের একটি শ্রেষ্ঠ গুণ। মানবজীবনে এর প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। পৃথিবীতে দুর্মূল্য কোনো কিছুকে মানুষ ‘সোনার হরিণ’ বলে আখ্যা দিয়ে থাকে। যখন মানব চরিত্রের অন্যতম গুণ সততাকে মানুষ সোনার হরিণ ভাবতে শুরু করা হচ্ছে- ঠিক সেই মুহূর্তে এমন সততা প্রদর্শনের ঘটনা বিরলই বলা চলে। তবে মানুষ এটা ভুলে গেছে যে, এই সততাই তো মানব চরিত্রের স্বাভাবিক গুণ। বর্তমান সময়ে যেটাকে বিলুপ্তপ্রায় বস্তুর সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে।
আমরা জানি, কোনো মানুষ কিন্তু অসৎ হয়ে জন্ম নেয় না। বরং নিষ্পাপ শিশুটি তার বয়স বৃদ্ধির সময়ে পরিচিত-অপরিচিতজনদের সঙ্গে স্বাভাবিক মেলামেশা এবং সামাজিকতার মধ্য দিয়ে সৎ কিংবা অসৎ হয়ে উঠে। তবে সততার পথ বন্ধুর নয়। শুধু এতটুকুই যে, সততা নিয়ে থাকতে হলে স্বার্থ-লোভ-মোহ এসব ত্যাগ করতে হয়। এর বেশি কিছু নয়। এই সততা ও বিশ্বস্ততার প্রতি আহ্বান জানিয়ে সৃষ্টিকর্তা আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! আল্লাহকে ভয় করো এবং সৎ-স্বচ্ছবাদী ও বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের সঙ্গী হও।’ -সূরা তাওবা : ১১৯
অনেক সৎ গুণের বৈশিষ্ট্য সততা। অসংখ্য হাদিসেও বিষয়টি আলোচিত হয়েছে। ওই সব হাদিসে বলা হয়েছে, ‘মানুষের উচিত সততা ও স্বচ্ছতা অবলম্বন করা। কেননা সততা ও স্বচ্ছতা মানুষকে পুণ্যের পথে পরিচালিত করে। আর পুণ্য জান্নাতের দিকে পরিচালিত করে। কোনো ব্যক্তি যখন স্বচ্ছ কথা বলে এবং সততা ও স্বচ্ছতার গুণ বৈশিষ্ট্য অর্জন করে- তখন আল্লাহর কাছে স্বচ্ছবাদী সিদ্দিক হিসেবে লিপিবদ্ধ হয়।’
মানব চরিত্রের শ্রেষ্ঠ গুণ হচ্ছে সততা। প্রত্যেক মানুষের কর্তব্য, জীবনে সততা ও বিশ্বস্ততার ফসল আহরণে তৎপর যত্নবান হওয়া; কেননা সততা ও স্বচ্ছবাদিতা উত্তম চরিত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। যার মধ্যে এ গুণের সমাহার থাকবে সমাজের সব ধরনের লোকভক্তি শ্রদ্ধা করবে।
সততা হলো মহামনীষীদের গুণ। সততার মূল্য নিরূপণ করতে গিয়ে কেউ কেউ বলেন, সততা নাকি যাবতীয় সম্পদের চেয়েও অধিক মূল্যবান! তাই জ্ঞানীরা বলেন, পার্থিব সম্পদহীন কোনো মানুষের মাঝে যদি সততার শক্তি থাকে- তাহলে সেই প্রকৃত সম্পদশালী। কারণ, সে এমন এক সম্পদের মালিক; যে সম্পদটি অনেকেরই নেই। মানুষের উচিৎ তা অর্জনে সচেষ্ট হওয়া ও জীবন চলার পথে তা প্রয়োগ করা।