৬১ হিজরির ১০ মহররম কারবালা প্রান্তরে হজরত ইমাম হোসেন (রা.)-এর শহিদ হওয়াকে কেন্দ্র করে বর্তমানে আশুরার গুরুত্ব পেলেও ইসলামের ইতিহাসে এইদিনে অসংখ্য তাৎপর্যময় ঘটনা রয়েছে। এ কারণে মুসলমানরা দিনটিকে ধর্মীয় ভাব-গাম্ভীর্যের মধ্যদিয়ে স্মরণ করে থাকেন। ইসলামের অনেক আগে থেকেই এ মাস অতি সম্মানিত এবং ফজিলতপূর্ণ।
হাদিসের প্রায় সব কিতাবে মহররম মাসের ফজিলত এবং এ মাসের ১০ তারিখ আশুরার রোজা সম্পর্কে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) থেকে বর্ণিত একাধিক হাদিস রয়েছে। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, রমজানের রোজার পর মহররম মাসের রোজা আল্লাহতায়ালার কাছে সবচেয়ে বেশি ফজিলতময়। -সহিহ মুসলিম: ১৯৮২
মদিনায় হিজরতের পর যখন রাসূলুল্লাহ (সা.) ইহুদিদের এ মাসের ১০ তারিখে রোজা রাখতে দেখলেন, তখন তিনি এর কারণ জিজ্ঞেস করলেন। ইহুদিরা জানালো, এ মাসের ১০ তারিখে আল্লাহতায়ালা হজরত মুসা আলাইহিস সালামকে অত্যাচারী শাসক ফেরাউনের কবল থেকে মুক্তি দিয়েছিলেন। এ তারিখে ফেরাউন নীলনদে ডুবে মারা যায়। এর কৃতজ্ঞতাস্বরূপ হজরত মুসা (আ.) এ দিনটিতে রোজা রাখতেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) তখন বললেন, আমরাও মুসা (আ.)-এর অনুসরণ করবো। তোমাদের চেয়ে আমাদের অধিকার বরং বেশি। তিনি তখন থেকে মহররমের ১০ তারিখ রোজা রাখা শুরু করলেন এবং সবাইকে নির্দেশ দিলেন। -সহিহ বোখারি: ১৮৬৫
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর এ আদেশের কারণে আশুরার রোজা সবার জন্য ওয়াজিব হিসেবে গণ্য হতো; কিন্তু যখন রমজান মাসের রোজার হুকুম নাজিল হলো, তখন আশুরার রোজার হুকুম ওয়াজিব থেকে সুন্নতের পর্যায়ে নেমে এলো। এ প্রসঙ্গে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) তখন বললেন, যে চায় সে রোজা রাখতে পারে এবং যে চায় না, সে না রাখলেও ক্ষতি নেই। -সহিহ বোখারি ও মুসলিম
আশুরার রোজার ফজিলত প্রসঙ্গে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, এ আশুরার দিন রোজা রাখার কারণে আল্লাহতায়ালা বান্দার বিগত এক বছরের গোনাহসমূহ মাফ করে দেন। -সহিহ মুসলিম: ১১৬২
মুসলিম শরিফের বর্ণনায় জানা যায়, ইন্তেকালের আগের বছর হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন, যদি আমি আগামী বছর বেঁচে থাকি তবে নয় তারিখেও রোজা রাখবো। এ জন্যই আশুরার রোজার সঙ্গে এর আগের দিন রোজা রাখাকে মোস্তাহাব বলেছেন উলামায়ে কেরাম।
প্রখ্যাত হাদিস বিশারদ হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানি (রহ.) হজরত ইবনে আব্বাসের বর্ণনা উল্লেখ করেছেন, যাতে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা আশুরার দিন রোজা রাখো। তবে এতে যেন ইহুদিদের সঙ্গে সামঞ্জস্য না হয়ে যায় সেজন্য এর সঙ্গে মিলিয়ে হয় আগের দিন কিংবা পরের দিনসহ রোজা পালন করো।
আশুরার রোজার বিধান প্রসঙ্গে ইসলামি স্কলারদের অভিমত হলো, কেউ যদি শুধু মহররম মাসের ১০ তারিখ রোজা রাখেন এবং এর আগে বা পরে একটি রোজা যোগ না করেন, তবে তা মাকরুহ নয়, বরং এতে মোস্তাহাব বিঘ্নিত হবে। কিন্তু প্রকৃত সুন্নত হলো- আগের ৯ মহররম বা পরের দিনের সঙ্গে ১১ মহররম মিলিয়ে মোট ২দিন রোজা রাখা। যে এ আশুরার দিন রোজা রাখতে পারলো না, তার জন্য কোনো সমস্যা কিংবা আশাহত হওয়ার কিছু নেই। যদি কেউ ৯, ১০ এবং ১১ তারিখ মোট ৩ দিন রোজা রাখেন তবে তা সর্বোত্তম হিসেবে গণ্য হবে। ইমাম ইবনুল কাইয়ুম এ মত উল্লেখ করেছেন।
আর আশুরার রোজার ফজিলতে যে এক বছরের গুনাহ মাফ করার সুসংবাদ রয়েছে, তা সগিরা গুনাহসমূহের জন্য প্রযোজ্য। কারণ অন্য এক হাদিসে রয়েছে, কবিরা গুনাহ এর আওতায় নয়। বরং কবিরা গুনাহ কখনোই তওবা ছাড়া মাফ হওয়ার নয়। ইমাম নববী এবং ইমাম ইবনে তাইমিয়াসহ প্রখ্যাত সব হাদিস বিশারদগণ এ মত ব্যক্ত করেছেন।
যারা আশুরার রোজা রাখতের আগ্রহী তাদের জন্যে মহররমের ৯, ১০ ও ১১ তারিখের সেহরি ও ইফতারের সময়সূচি উল্লেখ করা হলো।
১১ অক্টোবর, মঙ্গলবার, ৯ মহররম। সেহরির শেষ সময়: ভোর ৪টা ৩৮ মিনিট। ইফতারের সময়: সন্ধ্যা ৫টা ৪০মিনিট।
১২ অক্টোবর, বুধবার, ১০ মহররম। সেহরির শেষ সময়: ভোর ৪টা ৩৮ মিনিট। ইফতারের সময়: সন্ধ্যা ৫টা ৩৯মিনিট।
১৩ অক্টোবর, বৃহস্পতিবার, ১১ মহররম। সেহরির শেষ সময়: ভোর ৪টা ৩৮ মিনিট। ইফতারের সময়: সন্ধ্যা ৫টা ৩৮ মিনিট।