বিকেল হলেই চট্টগ্রাম মহানগরের গণপরিবহনের সকল বাস-মিনিবাস ‘রিজার্ভ’ হয়ে যায়। তখন এসব বাসের ভিআইপি যাত্রী হয় গার্মেন্টস শ্রমিকরা। আর অসহায় হয়ে পড়ে সাধারণ যাত্রীরা। যাদের গন্তব্যে পৌছতে ভোগান্তির পাশাপাশি গুণতে হয় অতিরিক্ত ভাড়াও।

যাত্রীরা জানান, চট্টগ্রাম মহানগরে চলাচলকারী প্রতিটি যাত্রীবাহি বাস-মিনিবাস এ সময়ে কোন যাত্রী পরিবহণ করে না। প্রতিটি বাস-মিনিবাসে ‘রিজার্ভ’ সাইনবোর্ড লাগিয়ে নগরীর বিভিন্নস্থান থেকে গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন কল-কারখানার শ্রমিকদের পরিবহণ করে। কোন যাত্রী গাড়িতে উঠতে চাইলে, এটা নয় বলে বাধা দেয় বাস-মিনিবাসের সহকারীরা। ফলে নগরীর প্রতিটি মোড়ে যাত্রীদের জট লেগে যায়।

সরেজিমনে দেখা যায়, নগরীর কালুরঘাট সেতু থেকে বহদ্দারহাট, মুরাদপুর, ষোলশহর ২নং গেইট, জিইসি, ওয়াসা, লালখান বাজার, টাইগারপাস, দেওয়ানহাট, আগ্রাবাদ চৌমুহনী, বাদামতল, ইপিজেড, চকবাজার, নিউমার্কেট, কদমতলি, শাহআমানত সেতু, বাকলিয়া, অক্সিজেন, কাজীর দেউরি, সদরঘাটসহ সবকটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে হাজার-হাজার যাত্রীর জট। যারা যাত্রীবাহি বাস-মিনিবাস ধরার জন্য হুড়াহুড়ি করছে। তাতে ব্যর্থ হয়ে অনেকে সিএনজি আটোরিকশা ও রিকশায় চড়ে গন্তব্যে ছুটছে। এ সময় অনেক যাত্রীকে গজগজ করতেও দেখা গেছে।

জানতে চাইলে নগরীর জিইসির মোড় থেকে সিএনজি অটোরিকশায় উঠা যাত্রী মাসুদুল ইসলাম (৫২) জানান, নিয়মিত চলাচলকারী সব বাস-মিনিবাস এখন রিজার্ভ হয়ে গেছে। বিকেল ৩টা থেকে দেড় ঘন্টা দাড়িয়ে থেকেও বাসে উঠতে পারিনি। গার্মেন্টস শ্রমিকদের বীরদর্পে নিয়ে যাচ্ছে বাসগুলো। গার্মেন্টস শ্রমিকরা মোড়ে দাড়ানো যাত্রীদের দেখে দেখে আরও হাসছে। অবস্থা দেখে মনে হয় গার্মেন্টস শ্রমিকরাই ভিআইপি যাত্রী।

তিনি বলেন, মায়ের অসুস্থতার কারনে গত ১৭ দিন ধরে নগরীর ন্যাশনাল হাসপাতালে আসা যাওয়া করছি আমি। কিন্তু প্রতিদিন বিকেল হলে আর বাড়ি ফেরা যায় না। জিইসির মোড় থেকে কাপ্তাই রাস্তার মাথা পর্যন্ত সিএনজি অটোরিকশায় নিয়মিত ১০০ টাকার ভাড়া ৩০০ টাকা দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। রিকশাওয়ালারা পর্যন্ত জিইসির মোড় থেকে ষোলষহর ২নং গেইট পর্যন্ত মাত্র এক কিলোমটিাওে ৫০-৬০ টাকা ভাড়া নিচ্ছে।

টাইগারপাস মোড়ে কয়েকজন যাত্রী আলাপকালে বলেন, বিকেল ৩টার পর থেকে নগরীর সকল বাস-মিনিবাস হয়ে যায় রিজার্ভ। গার্মেন্টস ও শিল্প-কারখানার শ্রমিকদের পরিবহণের কারনে নগরজুড়ে প্রতিটি মোড়ে মোড়ে সাধারণ যাত্রীরা জিম্মী হয়ে পড়ে।

এ সময় সিএনজি অটোরিকশা ও রিকশাওয়ালারাও সুযোগ বুঝে দ্বিগুণ-তিনগুন ভাড়া বেশি নেই। বাধ্য হয়ে অধিকাংশ যাত্রী অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে গন্তব্যে পৌছে। এ সময় সড়কজুড়ে সৃষ্টি হয় প্রচন্ড যানজটও। যার ফলে নানা ভোগান্তি পোহাতে হয় যাত্রীদের।

নগরীর পতেঙ্গা থেকে ৪ নং সড়কে লালদীঘির মোড় পর্যন্ত চলাচলকারী বাসের চালক মো. হারুনের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, নগরীর যতগুলো বাস আছে সব বাসই গার্মেন্টস ও শিল্পকারখানার মালিকদের সাথে চুক্তি করে শ্রমিকদের কারখানায় যাওয়া-আসা করে। এতে চালক বা হেলপারের কোন হাত নেই। বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির মাধ্যমে মালিকদের সাথে এ চুক্তি হয়ে থাকে।

চুক্তি মোতাবেক সকালে শ্রমিকদের কারখানার দিয়ে আসা হয়। এ সময় সড়কে সাধারণ যাত্রী তেমন থাকে না। তবে বিকেলে শ্রমিকদের যখন কারখানা থেকে নিয়ে আসা হয় তখন নগরীর প্রতিটি সড়কের মোড়ে মোড়ে হাজার হাজার যাত্রী আটকা পড়ে। কারণ শ্রমিকদের সাথে অন্য কোন যাত্রী নেওয়ার অর্ডার নেই।

এ সময় যাত্রীরা সড়কের মোড়ে ঘন্টার পর ঘন্টা দাড়িয়ে থাকে। শেষ-মেষ দ্বিগুণ ও তিনগুণ বেশি ভাড়া দিয়ে সিএনজি অটোরিকশা ও রিকশায় করে গন্তব্যে যেতে বাধ্য হয় বলে স্বীকার করেন তিনি। একইকথা বলেন, পতেঙ্গা থেকে কালুরঘাট পর্যন্ত চলাচলকারী ১০ নম্বর বাসের চালক নাসির উদ্দিনও।

তারা জানান, প্রতিটি বাস-মিনিবাস দুরত্ব ও আসন ভেদে এক হাজার থেকে ২ হাজার টাকা চুক্তিতে সকাল ও বিকেলে গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকদের পরিবহণ করে। এ কাজ শেষে সাধারণ যাত্রী নিয়ে চলাচল করে বাস ও মিনিবাসগুলো। এতে মালিকদের লাভ। চালক হেলপারের কোন লাভ নেই।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা চট্টগ্রাম মহানগর বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফখরুল ইসলাম বলেন, এটা আমাদের ব্যবসা। পাশাপাশি সেবাও। তাই লাভ ও সেবা চিন্তা করেই কারখানার শ্রমিকদের আনা-নেওয়া করে বাস-মিনিবাসগুলো।

প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আসলে নগরীর জনসংখ্যার অনুপাতে যানবাহন অনেক কম। শিল্প-কারখানায়ও বেড়ে গেছে অনেক শ্রমিক। যাদের আনা-নেওয়া করতে গিয়ে সাধারণ যাত্রীরা কষ্ট পাচ্ছে। যা অস্বীকার করার কোন পথ নেই।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মো. সামসুল আরেফিন বলেন, বিষয়টা আমার নজরে নেই। এ ব্যাপারে মাসিক সভায় আলোচনা করে সমস্যাটি সমাধান করা হবে।

Share Now
December 2024
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031