সনাতন ধর্মাবলম্বীরা চোখের জলে মা দুর্গাকে বিদায় জানিয়েছে। মঙ্গলবার বিকালে ‘দুর্গতিনাশিনী’ দেবীকে বিসর্জনের মধ্যদিয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়।
ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে বিভিন্ন নদী, খাল, বিল, পুকুর এবং জলাশয়ে প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হয়েছে। ঢাকায় কেন্দ্রীয়ভাবে ওয়াইজঘাটে ‘বিনা স্মৃতি স্নান ঘাটে’ প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হয়।
গত ৭ অক্টোবর মহাষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে পাঁচ দিনের দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। এরপর মহাসপ্তমী, মহাষ্টমী ও মহানবমীতে হিন্দু সম্প্রদায়ের হাজার হাজার নারী-পুরুষ ধর্মীয় নানা আচার-অনুষ্ঠান পালন করেন। বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় এই আনুষ্ঠানিকতার।
বিজয়া দশমী উপলক্ষে মঙ্গলবার ছিল সরকারি ছুটি। দশমীর পূজা আরম্ভ হয় সকাল ৮টা ৫২ মিনিটে আর পূজা সমাপন ও দর্পন বিসর্জন হয় ৯টা ৪৯ মিনিটে।
রাজধানীর পূজা উদযাপন কমিটির নেতারা জানান, দর্পণ বিসর্জনের মাধ্যমে মূলত সকালেই দেবীর শাস্ত্রীয় বিসর্জন সম্পন্ন হয়। বিকালে শুধু আনুষ্ঠানিক শোভাযাত্রা সহকারে দেবী দুর্গা ও অন্যান্য দেব-দেবীর বিসর্জন দেয়া হয়।
ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরের পক্ষ থেকে বিজয়া দশমীর বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হয় বিকাল তিনটায়। চারটায় দেবী দুর্গাসহ অন্যান্য দেব-দেবীকে শোভাযাত্রাসহ সদরঘাট নৌ-টর্মিনালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে বিসর্জনের মাধ্যমে দেব-দেবীদের আনুষ্ঠানিক বিদায় জানানো হয়। এর মধ্য দিয়ে দেবী মর্ত্যলোক থেকে আবার স্বর্গলোকে গমন করলেন।
ঢাকেশ্বরী মন্দির প্রাঙ্গণ থেকে কেন্দ্রীয় বিজয়া দশমীর শোভাযাত্রা বের করার আগে নগরীর বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিমা জড়ো হতে থাকে মন্দির প্রাঙ্গণ ও পলাশী মোড়ে। পরে পুরান ঢাকার বিভিন্ন সড়ক ঘুরে বুড়িগঙ্গার তীরে এসে শেষ হয় শোভাযাত্রা। শঙ্খ, উলুধ্বনি, খোল-করতাল, ঢাক-ঢোল ও কাঁসার বাজনার সঙ্গে দেশি-বিদেশি গানের সুর বাজিয়ে ভক্তরা দেবী বন্দনার গান গেয়ে রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে বুড়িগঙ্গার প্রতিমা ঘাটে নিয়ে যায় দুর্গা মাকে।
রাজধানীর অধিকাংশ মণ্ডপের প্রতিমা বিসর্জন হয় সদরঘাটে বুড়িগঙ্গা নদীতে। প্রতিমা ঘাটে নিয়ে আসার পর শেষবারের মতো ধুপধুনো নিয়ে আরতিতে মেতে উঠেন ভক্তরা। শেষে পুরোহিতের মন্ত্রপাঠের মধ্য দিয়ে দেবীকে নৌকায় তুলে বিসর্জন দেয়া হয়। বিসর্জনের এ পর্ব রাত ১২টা পর্যন্ত চলবে। এখানে ১৬০টিরও বেশি মণ্ডপের প্রতিমা বিসর্জন দেয়ার কথা রয়েছে।
বিশুদ্ধ পঞ্জিকামতে, জগতের মঙ্গল কামনায় দেবী দুর্গা এবার ঘোটকে (ঘোড়া) চড়ে মর্তলোকে (পৃথিবী) এসেছিলেন। বিদায় নিলেন সেই ঘোটকে (ঘোড়ায়) চড়েই।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের হিসাব অনুযায়ী, এবার সারাদেশে ২৯ হাজার ৩৯৫টি স্থায়ী ও অস্থায়ী মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়; যা গত বছরের তুলনায় ৩২৪টি বেশি। আর রাজধানী ঢাকায় পূজা হয় ২২৯টি মণ্ডপে।
পূরাণ মতে, রাজা সুরথ প্রথম দেবী দুর্গার আরাধনা শুরু করেন। বসন্তে এ পূজার আয়োজন করায় এ পূজাকে বাসন্তী পূজাও বলা হয়। রাবণের হাত থেকে সীতাকে উদ্ধারে যাত্রার আগে শ্রীরাম চন্দ্র দুর্গাপূজার আয়োজন করেছিলেন শরৎকালের অমাবশ্যার তিথিতে। এজন্যই দেবীর শরৎকালের এ পূজাকে অকাল বোধনও বলা হয়।
জানতে চাইলে মহানগর পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি ডি এন চ্যাটার্জি ঢাকাটাইমসকে জানান, ‘অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে আমাদের উৎসব শেষ হল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারির কারণে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। সকল মানবের কল্যাণ কামনায় আমরা মা দুর্গাকে বিদায় দিয়েছি।’