ব্যক্তিগত আক্রমণ। কদর্য ভাষার ব্যবহার। ভবিষ্যৎ নয়, অতীত নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি। অন্ধকার এক রাতের সাক্ষী হলেন যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ। হিলারি ক্লিনটন ও ডনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় দফার বিতর্কের প্রশংসার চেয়ে সমালোচনাই হচ্ছে বেশি। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, আধুনিক জমানায় এমন প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্ক আর হয়নি। জনপ্রিয় মার্কিন টেলিভিশন চ্যানেল সিএনএন এ বিতর্ককে বর্ণনা করেছে ‘নোংরা যুদ্ধ’ বলে। ৯০ মিনিটের বিতর্কে ব্যক্তিগত ইস্যুই বেশি টেনেছেন ট্রাম্প ও হিলারি। প্রথম দফার মতো ছক্কা হাঁকাতে না পারলেও এবারও জয়ী হয়েছেন হিলারিই। নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রথমদিকে বেশ চিন্তিত ছিলেন ট্রাম্প। কিন্তু ক্রমেই আক্রমণে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতে থাকেন তিনি। কয়েকদিন আগে নারীদের সম্পর্কে তার অশ্লীল ও নোংরা মন্তব্য প্রকাশের জেরে ভীষণ বিপাকে পড়েছিলেন ট্রাম্প। দৃশ্যত ওই চাপ এড়াতে তিনি বিল ক্লিনটনের বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ককে সামনে নিয়ে আসেন। এক পর্যায়ে তিনি বলেন, হিলারি ক্লিনটনের ব্যক্তিগত ই-মেইল সার্ভার ব্যবহারের তদন্তে একজন বিশেষ কৌঁসুলি নিয়োগ দেবেন তিনি। এমনকি বলেন, তার ক্ষমতা থাকলে এতদিনে হিলারি ক্লিনটন ‘জেলে থাকতেন’। ট্রামেপর এমন হুমকির জবাবে কিছুই বলেননি হিলারি। শুধু বলেছেন, ‘আমার বন্ধু মিশেল ওবামার (ফার্স্টলেডি) একটি মন্তব্য স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। তিনি বলেছিলেন, কেউ নিচ হলে, তুমিও নিচ হইও না, বরং উঁচু হও।’
পুরো সময়জুড়ে উভয় প্রার্থী দৃশ্যত অস্বস্তিতে ছিলেন। এমনকি বিতর্কের শুরুতে করমর্দনও করেননি একে অপরের সঙ্গে। নিউ ইয়র্ক টাইমস লিখেছে, ‘আমেরিকান রাজনীতিতে এটি খুবই কদর্য এক মুহূর্ত। দেশকে নেতৃত্ব দিতে চান যারা, তাদের মধ্যে এমন ব্যক্তিগত বিদ্বেষ খুব কমই দেখা গেছে।’
বিতর্কে বিল ক্লিনটনের প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেন, ‘নারীদের প্রতি নিপীড়নমূলক ছিলেন বিল ক্লিনটন। আর তাদেরই আক্রমণ করেছেন হিলারি, খুব নগ্নভাবে।’ ‘তারকা’ বলে নারীদের সঙ্গে যা ইচ্ছা করতে পারেন, তার নিজের এমন বক্তব্যের বিপরীতে তিনি যুক্তি দেখান, ‘বিল ক্লিনটন ছিলেন আরো খারাপ’। এসব মন্তব্যের জন্য ট্রাম্প ক্ষমা চেয়েছেন বটে। কিন্তু ওই মন্তব্যকে ‘লকার রুমের কথাবার্তা’ বলে হালকা করার চেষ্টা করেন। এমনকি তার অভিযোগ, বিল ক্লিনটনের নারী নিপীড়নের কথা তুলে ধরায়, হিলারি এখন তার বিরুদ্ধে পুরনো কথাবার্তা ছড়াচ্ছেন। তার ভাষ্য, ‘হিলারি এমন সব কথা তুলে আনছেন, যা আমি বলেছি ১১ বছর আগে। আমি মনে করি এসব লজ্জাজনক। তার নিজেকে নিয়ে লজ্জা পাওয়া উচিত এবং সত্য বলা উচিত।’ স্বামী বিল ক্লিনটনের ব্যাপারে যেসব অভিযোগ এনেছেন ট্রাম্প তার প্রতিক্রিয়ায় হিলারি সরাসরি কিছু বলেননি। তবে বলেছেন, ‘ট্রাম্প এই মাত্র যা বললেন তার অনেক কিছুই সঠিক নয়’। ট্রাম্পের করা অশ্লীল মন্তব্যের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এটাই হলো ডনাল্ড ট্রাম্পের আসল চিত্র। কিন্তু দেশ হিসেবে আমরা তো এমন নই।’
বিতর্কের মধ্যে বহুবার মডারেটর অ্যান্ডারসন কুপার ও মার্থা রাডাৎসের ব্যাপারে উষ্মা প্রকাশ করেছেন ট্রাম্প। কুপারকে তিনি প্রশ্ন করেন, ‘আপনি কেন হিলারি ই-মেইল প্রসঙ্গ তুলছেন না?’ এর আগে তিনি মডারেটরদ্বয়ের বিরুদ্ধে সরাসরি হিলারির পক্ষাবলম্বনের অভিযোগ আনেন। বলেন, ‘ভালোই তো! একজনের বিরুদ্ধে তিনজন লেগেছে।’
বিতর্কের উল্লেখযোগ্য অংশ হলো, নিজের ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী মাইক পেন্সের সঙ্গে ট্রামেপর দ্বিমত পোষণ করা। উভয় প্রার্থীকে প্রশ্ন করা হয়, সিরিয়ার আলেপ্পোয় রাশিয়ান বাহিনীর বিমান হামলায় মানবিক বিপর্যয়ের প্রেক্ষিতে তারা কী করবেন? ট্রামপ বলেন, মানবিক বিপর্যয় নিয়ে একটি কথাও বলেননি। বরং বলেন, রাশিয়া ও তাদের মিত্র সিরিয়া সেখানে জঙ্গি গোষ্ঠী আইএস হত্যা করছে। এমনকি তিনি প্রেসিডেন্ট হলে, রাশিয়ার সঙ্গে একযোগে কাজ করার সম্ভাবনা নিয়েও কথা বলেন। তাকে তখন উপস্থাপক স্মরণ করিয়ে দেন যে, তারই রানিংমেট মাইক পেন্স বলেছেন যে, প্রয়োজনে সিরিয়ার ওপর মার্কিন বাহিনীর বিমান হামলা চালানো উচিত। এ সময় ট্রামপ বলেন, আমি তার সঙ্গে একমত নই।
প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রথম বিতর্কের চেয়ে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী ও আক্রমণাত্মক মনে হয়েছে ডনাল্ড ট্রাম্পকে। হিলারির বক্তব্যকে তিনি প্রায়ই এক কথায় উড়িয়ে দিয়েছেন। বলেছেন, ৩০ বছর ধরে রাজনীতি করেও হিলারির কোনো অর্জন নেই। হিলারি নিজের পলিসি দর্শকদের সামনে উপস্থাপন করার পর তিনি বলে উঠেন, ‘এসব স্রেফ ফাঁকা বুলি, বন্ধুরা। স্রেফ বুলি। শুধু কথা, কোনো কাজ নেই।’
পুরো বিতর্ক জুড়ে ডনাল্ড ট্রাম্প মধ্যপন্থি ভোটারদের কাছে টানার কোনো চেষ্টাই চালাননি। এক দর্শক উভয় প্রার্থীর কাছে প্রশ্ন রাখেন, তারা সব আমেরিকানের জন্য নিবেদিত প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন কিনা? তিনি বলেন, অবশ্যই পারবো। কিন্তু অতীতে তার করা বিভাজনমূলক মন্তব্য স্বীকার না করে তিনি আক্রমণ করেছেন হিলারিকে। অপরদিকে দর্শকদের করা প্রশ্নের উত্তর সরাসরি তাদের দিকে ফিরিয়ে দিয়েছেন হিলারি। তাদের সঙ্গে কথোপকথনের সুরে কথা বলেছেন। তাদের প্রতি সহানুভূতির ছাপও ছিল তার কণ্ঠে। প্রশ্নকর্তা কার্টারের দিকে ফিরে তিনি বলেন, ‘আমি আমেরিকার কোটি শিশু ও পরিবারের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি আজীবন। আপনি জানেন নিশ্চয়ই, আইন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া শেষ করেই আমি শিশুদের জন্য কাজ করতে বেরিয়ে যাই। আর ডনাল্ড আমার এই ৩০ বছরের ক্যারিয়ার নিয়ে অনেক কিছুই বলেন। আমি এ ৩০ বছর জনসেবায় ছিলাম। আমি এ নিয়ে গর্বিত।’
বিতর্কের শেষ প্রশ্ন করেন এক দর্শক। তিনি উভয় প্রার্থীর কাছে প্রশ্ন রাখেন, ‘আপনারা একে অপরের ব্যাপারে অনেক কিছুই বলেছেন। কিন্তু আপনার প্রতিপক্ষের মধ্যে এমন কোনো দিক আপনি দেখতে পান কি না যা আপনার ভালো লাগে?’ প্রশ্ন শুনে হেসে উঠেন সবাই। হিলারি নিজের উত্তরে বলেন, ‘আমি তার সন্তানদের শ্রদ্ধা করি। তার সন্তানরা খুবই নিবেদিত।’ ট্রাম্প এই প্রশংসার জন্য হিলারিকে ধন্যবাদ জানান। এরপর হিলারির ভালো বৈশিষ্ট্যের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি হিলারির ব্যাপারে এটাই বলবো যে, তিনি কখনই সরে যান না। তিনি হাল ছাড়েন না। তিনি একজন লড়াকু ব্যক্তি। এটা ভালো গুণ।’ এরপরই বিতর্কের সমাপ্তি ঘোষণা করেন মডারেটররা। হিলারির উদ্দেশে হাত বাড়িয়ে দেন ট্রাম্প। আর সাড়া দিয়ে করমর্দন করেন হিলারি। পুরো ৯০ মিনিটের এ শেষ ক’মিনিটই হয়তো কিছুটা ভদ্রোচিত ছিল।
কে জিতেছেন বিতর্কে?
মার্কিন দ্বিতীয় প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্ক শেষ। রইলো বাকি এক। প্রথমটিতে বিশ্লেষক আর জনমত জরিপে মোটামুটি হিলারির জয়ের চিত্রই উঠে এসেছে। কিন্তু এবার আরও আক্রমণাত্মক ছিলেন রিপাবলিকান প্রার্থী ডনাল্ড ট্রাম্প। আগের মতো বাগড়া দেননি প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্রেটিক প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের বক্তব্যে। কিন্তু হিলারিকে জেলে পুরার প্রচ্ছন্ন হুমকিও দিয়েছেন তিনি। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে জেলে পুরার এমন হুমকি মার্কিন রাজনীতিতে নজিরবিহীন। এ বিতর্কের বহু দিক আছে। মোটামুটি অনেক বিষয় আলোচিত হয়েছে দু’ প্রার্থীর মধ্যে। কিন্তু জিতলেন কে? বিভিন্ন জনমত জরিপ ও গণমাধ্যমের বিশ্লেষকদের মতামত তুলে ধরা হলো।
জনমত জরিপ
বিতর্ক পরবর্তী তৎক্ষণাৎ জনমত জরিপ হয়েছে অনেকগুলো। টেলিভিশন চ্যানেল সিএনএন ও ওআরসির একটি যৌথ জরিপে দেখা গেছে ৫৭ শতাংশ ভোটদাতা মনে করেন বিতর্কে জিতেছেন হিলারি ক্লিনটন। ট্রাম্প জিতেছেন বলে মনে করেন মাত্র ৩৪ শতাংশ। তবে ভোটদাতাদের মধ্যে ডেমোক্রেটিক দলের সদস্য ছিলেন কিছুটা বেশি। জরিপ সংস্থা ইউগভ ৮১২ জন নিবন্ধিত ভোটারের কাছে মতামত জানতে চেয়েছে। এদের মধ্যে ৪৭ শতাংশ মনে করেন হিলারি জিতেছেন। ৪২ শতাংশ ভোটদাতা মনে করেন জিতেছেন ট্রাম্প। তবে এখনও কাকে ভোট দেবেন সিদ্ধান্ত নেননি, এমন ভোটারদের মধ্যে ৪৪ শতাংশ হিলারিকে বিজয়ী মনে করেন। এ ভোটারদের মধ্যে ট্রাম্পের পক্ষে রায় ৪১ শতাংশের। এছাড়া বহু অনলাইন জরিপ হয়েছে। কিন্তু এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত এ দুটি গ্রহণযোগ্য জনমত জরিপের ফলাফল বের হয়েছে।
বিশ্লেষকদের মত
বিবিসি’র নর্থ আমেরিকা রিপোর্টার অ্যান্থনি জার্চার নিজের কলামে লিখেছেন, তিনি মনে করেন ট্রাম্প জিতেছেন। এর ব্যাখ্যাও দিয়েছেন তিনি। তার মতে, ট্রাম্পের নোংরা মন্তব্য প্রকাশের জেরে গত ৪৮ ঘণ্টা ধরে ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারাভিযান নিয়েই সংশয় দেখা দিয়েছিল। ফলে বিতর্কে ট্রাম্পের লক্ষ্য দাঁড়ায় সমর্থকদের এই ভরসা দেয়া যে তার ক্যাম্পেইন এখনও শেষ হয়নি। আর এটাই ছিল তার জয়ের মাপকাঠি। জার্চারের মতে, ট্রাম্প তা পেরেছেন। ট্রাম্প সমর্থকরা এখনও আশা দেখছেন। অপরদিকে হিলারি সমর্থকদের প্রত্যাশা ছিল এ বিতর্কে হিলারি ট্রাম্পের কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দেবেন। কিন্তু হিলারি তা পারেননি।
গার্ডিয়ানের কলামিস্ট রিচার্ড ওলফের মতে ট্রাম্পের পারফরম্যান্স ‘আহত জানোয়ারের মতো উন্মত্ত’ ছিল কেবল। বলার অপেক্ষা রাখে না তিনি কাকে বিজয়ী মনে করছেন। আরেক গার্ডিয়ান কলামিস্ট জেসিকা ভ্যালেন্টির মতে, এ বিতর্কে কে জিতেছে, সেটা পরের কথা। কিন্তু ট্রাম্প নিজের নারীদের নিয়ে অশ্লীল ও নোংরা মন্তব্যের জন্য অনুতপ্ত না হয়ে, বরং আরও জোর খাটিয়েছেন। অজুহাত দেখিয়েছেন। তাই এ বিতর্কে পরাজিত হয়েছে সকল দর্শক। আরেক কলামিস্ট ক্রিস্টোফার আর. ব্যারন মনে করেন, ট্রাম্প জিতেছেন। কারণ তিনি আবারও ‘মোমেন্টাম’ ফিরে পেয়েছেন। সিএনএন’র বেশিরভাগ পর্যবেক্ষক মনে করেন, ট্রাম্প হেরেছেন। তবে অনেকের মতে হিলারি হেরেছেন। এরা মনে করেন, ‘নক আউট পাঞ্চ’ দেয়ার সুযোগ হারিয়েছেন হিলারি।
নিউ ইয়র্ক টাইমস একসঙ্গে করেছে অনেক পর্যবেক্ষকের মন্তব্য। রক্ষণশীল ওয়েবসাইট টাউনহলের রাজনীতিবিষয়ক সম্পাদক গাই বেনসন বলেন, ‘ট্রাম্পের অগ্রগতি হয়েছে। প্রত্যাশার চেয়ে ভালো করেছেন। কিছু ক্ষেত্রে স্পষ্টভাবে বিজয়ী ছিলেন। হিলারি আজকেই তার সব কিছুর অবসান ঘটাতে পারতেন। কিন্তু করেননি।’ রক্ষণশীল ব্লগ দ্য রিসার্জনেন্টের লেখক এরিক এরিকসন লিখেছেন, ‘আমি ট্রাম্প নিয়ে এত ভাবি না। কিন্তু আজ রাতে তিনি হিলারিকে হারিয়েছেন।’ প্রখ্যাত দ্য আটলান্টিক ম্যাগাজিনের লেখক রন ফোর্নিয়ের বলেন, ‘ডনাল্ড ট্রাম্প জানেন যে তিনি প্রেসিডেন্ট হবেন না। তাই তিনি ক্ষেপাটে আচরণ করেছেন বিতর্কে।’ ওয়াশিংটন পোস্টের কলামিস্ট জেনিফার রুবিন লিখেছেন, ‘নিজের মেজাজ ধরে রেখেছেন হিলারি। ট্রাম্পকে খুঁচিয়ে তার মুখ থেকে হুমকি বের করে এনেছেন। তাই নিশ্চিতভাবে তিনিই এ বিতর্কে জয়ী।’ রক্ষণশীল পর্যবেক্ষক ও লাইফজেট-এর সম্পাদক লরা ইনগ্রাহাম বলেন, যেসব রিপাবলিকান ডনাল্ড ট্রাম্প থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন, তারা আজ নিজেদের বোকা ভাবছেন। মোরহাউজ কলেজের অধ্যাপক মার্ক লামন্ট হিল মনে করেন, ‘ট্রাম্পকে পরাজিত মনে হয়েছে। প্রায় অসংলগ্ন আচরণ করেছেন তিনি।’ রক্ষণশীল ওয়েবসাইট রেড স্টেটের ব্লগার জে কারুসো বলেন, ‘হিলারির সুযোগ ছিল নকআউট পাঞ্চ মারার। কিন্তু তিনি এ সুযোগ হারিয়েছেন।’ লিবারেল গ্রুপ সেন্টার ফর আমেরিকান প্রোগ্রেসের জ্যেষ্ঠ ফেলো কেন গুড বলেন, ‘পেন্সের বদলে পুতিনকে বেছে নিয়েছেন ট্রাম্প। আলেপ্পোকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। বারবার ইরাক নিয়ে মিথ্যা বলেছেন। শোচনীয় মেজাজ দেখিয়েছেন ট্রাম্প।’ ডেইলি বিস্ট-এর ওয়াশিংটন ব্যুরো চিফ সিবিসিনিউজ-এ এক কলামে লিখেছেন, তিনি মনে করেন ট্রাম্প সামান্য ব্যবধানে জিতেছেন। কিন্তু তাতে তার উপকার খুব একটা হবে না।
সুযোগ হেলায় হারালেন হিলারি!
মার্কিন প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনে ডেমোক্রেট ও রিপাবলিকান দুই প্রার্থীর মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল দ্বিতীয় টিভি বিতর্ক। হিলারি ক্লিনটন ও ডনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে অনুষ্ঠিত এই বিতর্ককে এরই মধ্যে মার্কিন ইতিহাসের সবচেয়ে তিক্ত মোকাবিলা মনে করা হচ্ছে। উভয় প্রার্থীই নারীদের সঙ্গে কেমন আচরণ করেছন তা-ই ছিল এই বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে। বিতর্ক শেষ হতে না হতেই বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এই বিতর্ক নিয়ে তাদের নিজেদের মতামত ব্যক্ত করেছেন। স্কাই নিউজের সংকলন করা সেসব মতামতই তুলে ধরা হলো।
মার্কিন একটি চ্যাট শোয়ের উপস্থাপক জেরি স্প্রিংগার মন্তব্য করেছেন, ‘আমি হয়তো একটি বিতর্ক সঞ্চালনা করতে সক্ষম হব না। তবে মনে হচ্ছে মাইক পেন্স ও ডনাল্ড ট্রাম্পকে হয়তো আমার শোতে এসে কথা বলতে হবে।’ চলচ্চিত্র নির্মাতা মাইকেল মুর বলেছেন, ‘ডনাল্ড ট্রাম্পের পতন আজ রাতে হয়নি। তিনি একটি ভোটও হারাননি, হয়তো আরও কয়েকটি অর্জন করেছেন। অন্যদিকে তিনি (হিলারি) আবারও ছিলেন চৌকষ একজন এবং দয়ালু।’ ডনাল্ড ট্রাম্পের রানিং মেট বা ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী মাইক পেন্স টুইট করেছেন, ‘আমার প্রার্থী ডনাল্ড ট্রাম্পকে বড় একটি বিতর্কে জয়লাভের জন্য অভিনন্দন। আপনার সঙ্গে থাকতে পেরে গর্বিত অনুভব করছি। কারণ আমরা আমেরিকাকে আবারও মহৎ করে গড়ে তুলব।’ মার্কিন অনলাইন গণমাধ্যম হাফিংটন পোস্টের প্রতিষ্ঠাতা আরিয়ানা হাফিংটন বলেছেন, ‘প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্ক শেষ হয়েছে। এবার আপনি শিশুদের আবারও বসার ঘরে ফিরিয়ে নিতে পারেন।’
দ্বিতীয় এই বিতর্কে আলোচনায় ছিল নারীদের নিয়ে করা বিভিন্ন মন্তব্য। এ প্রেক্ষিতে লেখক-সাংবাদিক নিকোল চুং টুইট করেন, ‘তিনি থেমে যান না। তিনি হাল ছাড়েন না।’ তার অর্থ আপনি (ট্রাম্প) বলছেন যে তার (হিলারি) স্ট্যামিনা আছে?’ স্টার ট্রেকের তারকা জর্জ তাকেই বলেন, ‘ট্রাম্প স্পষ্ট দিবালোকের মতো বিষয়গুলো এবং ওই ভিডিও টেপে উঠে আসা কথাগুলো তার টুইটে অস্বীকার করার চেষ্টা করে আসছেন। তিনি হয়তো মিথ্যা বলতে পারেন। কিন্তু ওই রেকর্ডগুলো মিথ্যা বলবে না।’ রাজনৈতিক ধারাভাষ্যকার ইয়ান ডেল বলেন, ‘বিতর্কের ফলাফল? ঘৃণিত ট্রাম্পকে হিলারি ছেড়ে দিয়েছেন। তিনি আরও একদিন লড়াইয়ের সুযোগ পাচ্ছেন। সম্ভবত এটাই হিলারি চেয়েছিলেন।’ রাষ্ট্র বিজ্ঞানের অধ্যাপক দান্তে স্ক্যালা বলেন, ‘আজকের সন্ধ্যায় খুব বেশি কিছু ঘটতে আমি দেখিনি। গত ৪৮ ঘণ্টার খবরই ভোটারদের মানসিকতা ঠিক করে দেবে এবং আমি নিশ্চিত নই এই বিতর্ক নিজে থেকে প্রেসিডেন্ট পদের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কোনো পরিবর্তন আনার জন্য যথেষ্ট হবে কি না।’ অভিনেত্রী এমি রসাম লিখেছেন, ‘আপনার মনে কেবল ঘৃণা রয়েছে, ডনাল্ড ট্রাম্প (হিলারি নয়)।’
সেন্টার ফর পলিটিক্সের ডিরেক্টর ল্যারি সাবাতো টুইট করেছেন, ‘ট্রাম্প রিপাবলিকানদের রক্তপাত বন্ধে যথেষ্ট ভালো করেছেন। তার আক্রমণের লক্ষ্য ‘পক্ষপাতদুষ্ট সঞ্চালক’। ফলাফল? সহজে ছেড়ে দেয়ার জন্য তার ওপর চাপ।’ রাজনৈতিক ধারাভাষ্যকার স্যালি কোনো বলেন, ‘সুতরাং, সবাই লক্ষ্য করেছে যে ডনাল্ড ট্রাম্প প্রকৃতপক্ষেই তেমন কিছু বলেননি। ঠিক আছে?’ সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এরিক হোল্ডার বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে আমরা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে কারাগারে প্রেরণের হুমকি দেই না। ডনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন তিনি তা করবেন। তিনি তার কার্যালয়ের ক্ষমতার অপব্যবহারের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন।’
M | T | W | T | F | S | S |
---|---|---|---|---|---|---|
1 | ||||||
2 | 3 | 4 | 5 | 6 | 7 | 8 |
9 | 10 | 11 | 12 | 13 | 14 | 15 |
16 | 17 | 18 | 19 | 20 | 21 | 22 |
23 | 24 | 25 | 26 | 27 | 28 | 29 |
30 | 31 |