বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স লিমিটেড দেনার দায়ে ডুবতে বসেছে । কোম্পানি হওয়ার আগে দেউলিয়াত্বের হাত থেকে বিমানকে রক্ষা করেছে সরকার। কোম্পানি হওয়ার পরও পরিস্থিতি বদলায়নি। দিনে দিনে দেনার পরিমাণ বাড়ছে। দেনা-পাওনার চূড়ান্ত হিসাব থেকে জানা গেছে, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, সংস্থা, এয়ারলাইন্স ও ট্রাভেল এজেন্টের কাছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পাওনা প্রায় তিনশ’ কোটি টাকা। অথচ রাষ্ট্রীয় এ বিমান সংস্থাটির কাছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) পাবে দুই হাজার সাতাশ কোটি ৯০ লাখ ৯০ হাজার ৬৬০ টাকা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, অনিয়ম, দুর্নীতি, সিদ্ধান্তহীনতা আর বাণিজ্যিক পরিকল্পনার অভাবে রাষ্ট্রীয় এ সংস্থাটি মুখ থুবড়ে পড়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিমানের একাধিক কর্মকর্তা জানান, যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ার ধ্বংসের পর এশিয়ায় এয়ারলাইন্স ব্যবসার প্রসার ঘটলেও বাংলাদেশ বিমানের ঘটনা ছিল ঠিক উল্টো। কোনো বাণিজ্যিক পরিকল্পনা ছাড়াই আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ রুটে পুরনো জাহাজ দিয়ে জোড়াতালির মাধ্যমে ফ্লাইট পরিচালনা করতে গিয়ে প্রায়ই বিশৃঙ্খল অবস্থার মধ্যে পড়তে হয়। উড়োজাহাজ বিকল, ফ্লাইট বিলম্ব ও বাতিলসহ নানা সমস্যার কারণে যাত্রীদের দুর্ভোগের পাশাপাশি বিমানকেও প্রচুর অর্থ গচ্চা দিতে হচ্ছে। বেবিচক সূত্রে জানা গেছে, আগস্ট পর্যন্ত হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কাছে বিল ও সারচার্জসহ পাবে এক হাজার ৫৭৫ কোটি ৯৫ লাখ ৪৬ হাজার ৪২৮ টাকা। এছাড়া চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ৩৩৯ কোটি ২১ লাখ তিন হাজার ৭৬৩ টাকা, সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ১২৫ কোটি ১৩ লাখ ৬৪ হাজার ৯৭২ টাকা, কক্সবাজার বিমানবন্দর পাঁচ লাখ ৩৫ হাজার ৬৬৬ টাকা, যশোর বিমানবন্দর তিন লাখ ৭২ হাজার ৪৮০ টাকা, রাজশাহীর শাহ মখদুম বিমানবন্দর দুই লাখ ৫৭ হাজার ২৬ টাকা এবং বরিশাল বিমানবন্দর দুই লাখ ২০ হাজার ১৭৮ টাকা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কাছে পাবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আগস্ট পর্যন্ত বিমানের কাছে বেবিচকের পাওনা টাকার পরিমাণ দুই হাজার ৪০ কোটি ৪৪ লাখ ৫১৪ টাকা। এর মধ্যে আগস্ট মাসে বিমান পরিশোধ করেছে ১২ কোটি ৫৩ লাখ ৩২ হাজার ২২৩ টাকা। তাই সব মিলিয়ে পাওনা দুই হাজার ২৭ কোটি ৯০ লাখ ৬৮ হাজার ২৯০ টাকা। বিমান সূত্রে জানা গেছে, দেশি- বিদেশি বিভিন্ন এয়ারলাইন্স, বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনার খরচ হিসেবে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কাছে মোটা অঙ্কের অর্থ পাবে তারা। এছাড়া, বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্ট, জেনারেল সেলস এজেন্ট (জিএসএ) এবং অন্যান্য সেলস এজেন্টের কাছেও বিমানের পাওনা রয়েছে। তবে বিমানের যে পাওনা তার তুলনায় দেনা সাড়ে সাত গুণেরও বেশি। সিভিল এভিয়েশনের এয়ারপোর্ট ব্যবহারসহ নানা কারণে এ দেনার সৃষ্টি হয়েছে। বিমান সরকারের পক্ষে যাত্রীদের কাছ থেকে ফরেন ট্রাভেল ট্যাক্স আদায় করে থাকে। এটা পরে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিতে হয়। এমন অনেক অর্থও জমা হয়নি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জ্বালানি কেনা বাবদ পদ্মা অয়েল বিমানের কাছে মোটা অঙ্কের অর্থ পাবে। এছাড়া বিভিন্ন দেশের এয়ারপোর্ট ব্যবহারসহ অন্যান্য কারণে লন্ডন, নিউ ইয়র্ক, দুবাই, জেদ্দা, সিঙ্গাপুর, হংকং, ব্যাংককে বিমানের দেনার পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে। বিমানের একজন সাবেক এমডি বলেন, ব্যবসায়িক স্বার্থে বিভিন্ন এয়ারলাইন্স নানা ধরনের প্যাকেজ ও যাত্রীসেবা বাড়াচ্ছে। বিমানে এসব কিছুই নেই। বরং টিকিট কিনতে গিয়েও যাত্রীরা হয়রানির শিকার হন। বিমানের প্রায় প্রতিটি কেনাকাটায় আর্থিক অনিয়মের ঘটনা ঘটে। মুদি দোকানেরও একটি বাণিজ্যিক পরিকল্পনা থাকে, বিমানের তাও নেই।
M | T | W | T | F | S | S |
---|---|---|---|---|---|---|
1 | ||||||
2 | 3 | 4 | 5 | 6 | 7 | 8 |
9 | 10 | 11 | 12 | 13 | 14 | 15 |
16 | 17 | 18 | 19 | 20 | 21 | 22 |
23 | 24 | 25 | 26 | 27 | 28 | 29 |
30 | 31 |