নৌ-পরিবহন মন্ত্রী এবং নদ-নদীর নাব্যতা ও স্বাভাবিক গতিপ্রবাহ অব্যাহত রাখার জন্য গঠিত টাস্কফোর্সের সভাপতি শাজাহান খান বলেছেন, নদী দখলকারী যত শক্তিশালী ও প্রভাবশালী হোক না কেন, তাদের কবল থেকে তা মুক্ত করা হবে। আইন অনুযায়ী বিচারের মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

নদীর স্বাভাবিক গতিপ্রবাহ অব্যাহত রাখা, নাব্যতা রক্ষা ও দূষণমুক্ত রাখার জন্য জন্য গঠিত টাস্কফোর্সের বুড়িগঙ্গা, তুরাগ ও বালু নদী সরেজমিন পরিদর্শনকালে নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।

রোববার বেলা আড়াইটায় আশুলিয়া ল্যান্ডিং স্টেশন চত্বরে পরিদর্শনের বিষয় সম্পর্কে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন নৌ-পরিবহনমন্ত্রী। টাস্কফোর্সের অন্যতম সদস্য এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনও এসময় গণমাধ্যমে কথা বলেন।

সকাল পৌণে ১১টায় সদরঘাট টার্মিনাল থেকে দুই মন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বিআইডব্লিউটিসি’র ছোট লঞ্চ যোগে নদী পরিদর্শন কার্যক্রম সরেজমিনে শুরু করেন।

বুড়িগঙ্গা নদী দিয়ে যাত্রা শুরু করে গাবতলী, আমিনবাজার হয়ে আশুলিয়া ল্যান্ডিং স্টেশনে পরিদর্শন দলের সদস্যরা সাময়িক যাত্র বিরতি করেন। এসময় নৌ পরিবহন মন্ত্রী এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী গণমাধ্যমে কথা বলেন। পরে পরিদর্শন দলের সদস্যরা টঙ্গী নদী বন্দর পর্যন্ত সরেজমিনে পরিদর্শন করেন।

নৌপরিবহনমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকারের সময় তার নির্দেশে নদীর দূষণমুক্ত, নদ-নদীর নাব্যতা ও নদীর স্বাভাবিক গতিপ্রবাহ অব্যাহত রাখার জন্য ২০১১ সালে টাস্কফোর্স গঠিত হয়। এই টাস্কফোর্স গঠনের পর থেকে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। ঠাস্কফোর্সের ৩১ তম সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক আজ আমরা বুড়িগঙ্গা ও তুরাগ নদীসহ অন্য নদী পরিদর্শনে এসেছি। এই পরিদর্শন করে অনেকগুলো বিষয় আমরা চিহ্নিত করেছি এবং পরবর্তীতে এসব বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

তিনি বলেন, আমরা নদীকে দখলমুক্ত করার জন্য কাজ করছি। কিন্তু এসব কাজ করার জন্য আমাদের জনবলের ঘাটতি রয়েছে। যান্ত্রিক সহযোগিতারও অভাব রয়েছে।

নৌপরিবহন মন্ত্রী আরও বলেন, বর্তমান সরকারের সময় আমরা ভৈরব নদী দখলমুক্ত করা হয়েছে। যে দখলকারীরা সেটা ভরাট করেছিল তাদেরকে দিয়েই তা অপসারণ করানো হয়েছে।

টাস্কফোর্স সর্বশক্তি বা ক্ষমতা প্রয়োগ করে কাজ করছে এবং আগামিতেও তা অব্যাহত রাখা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, নদীর সীমানা নির্ধারণের জন্য ইতোমধ্যে আমরা ৬ হাজার পিলার স্থাপন করেছি। কিন্তু এর মধ্যে ২ হাজার পিলারের বিষয়ে আপত্তি রয়েছে। এগুলো পুনরায় সার্ভে করে নিষ্পত্তি করা হবে। একই সাথে ড্রাইভ ওয়ে ও ওয়াক ওয়ে করা হবে। যাতে করে নদী যেন আর দখল না হয়ে যায়।

এদিকে গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, নদী দূষণমুক্ত করার জন্য বর্তমান সরকার কাজ করে যাচ্ছে। এ বিষয়টি নৌ বাহিনী দেখাশুনা করছে।

তিনি বলেন, জলাশয়ের জায়গায় জলাশয় থাকবে। জলাশয়ের বিষয়ে দেশে বিদ্যমান আইন রয়েছে। জলাশয় যারা ভরাট করবে তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ি কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী পরিদর্শনের সময়কার তার অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে বলেন, তুরাগ নদীতে আসার সময় মনে হয়েছে, এখানে এখন ১৮০ ফিট প্রশস্ততা রয়েছে। আমি টাস্কফোর্সের সভায় এই নদীর প্রশস্ততা ৪০০ ফিট করার জন্য পরামর্শ দেব। নদীর নাব্যতা বৃদ্ধির জন্য ড্রেজিং করে পাড় বেঁধে দিতে হবে।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মোশাররফ হোসেন বলেন, নদীর তীরে অনুমোদন ছাড়া কোনো হাউজিং প্রকল্প হয়ে থাকলে তা উচ্ছেদ করা হবে।

সে সময় তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ঢাকার চারদিকে সার্কুলার ওয়াটার ওয়ের আওতায় যে ১৩টি নিচু ব্রিজ রয়েছে তা উচু ও প্রশস্ত করা হবে।

সে সময় পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. জাফর আহম্মেদ খান, শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব বেগম পরাগ বেগম, বিআইডব্লিউটিএ-এর চেয়ারম্যান কমডোর এম মোজাম্মেল হক, বিআইডব্লিউটিসি-এর চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমান, নদী রক্ষা কমিশনের সদস্য মো. আলাউদ্দিনসহ সংশিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

Share Now
January 2025
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031