যৌথ প্রযোজনার ছবি নির্মাণ আমাদের দেশে নতুন বিষয় নয়। স্বাধীনতার পর থেকেই নানা দেশের সঙ্গে এই নিয়মে অনেক ছবি নির্মাণ হয়েছে। তখন যে নীতিমালার অধীনে ছবি নির্মাণ হয়েছে তাতে দু’দেশের স্বার্থ রক্ষা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, তুরস্ক ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রায় অর্ধশতাধিক যৌথ প্রযোজনার ছবি নির্মিত হয়েছে। ১৯৮৬ সালের যৌথ প্রযোজনা নীতিমালায় বলা হয়, সব দেশের শিল্পীদের সমানহারে অংশগ্রহণের নিশ্চয়তা বাধ্যতামূলক। ২০১২ সালে সে নীতিমালায় পরিবর্তন আনা হয়। এতে বলা হয়, দু’দেশের নির্মাতারা আলোচনার মাধ্যমে ছবি নির্মাণের বিষয়ে যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেবেন। কিন্তু এই নিয়মের পর যৌথ প্রযোজনায় ছবি নির্মাণ দেশীয় চলচ্চিত্রের জন্য আশীর্বাদ না অভিশাপ হয়েছে তা নিয়ে শুরু হয় নানা তর্ক-বিতর্ক। এসব বিষয় নিয়ে ধারাবাহিক এ প্রতিবেদনে কথা বলেছেন দেশীয় চলচ্চিত্রের বিভিন্ন নির্মাতা, প্রযোজক, অভিনেতা, অভিনেত্রী, পরিবেশক ও হল মালিক। প্রতিবেদনটি গ্রন্থনা করেছেন কামরুজ্জামান মিলু
ফারুক
চলচ্চিত্রের কথা বলতে গেলে যৌথ শব্দটা যখন আসে তখন একটা ভিন দেশের ছায়া পড়ে। আমি মনে করি চলচ্চিত্র, নাটক, গান বা পেইন্টিং পৃথিবীর সব দেশে চলতে পারে। তবে যখনই একটা রাষ্ট্রের কথা আসবে, একটা বর্ডার আসবে, সরকারের কথা আসবে তখন সেই বিষয়টি আলাদা। যেমন: বর্তমানে ভারতের সঙ্গে আমাদের যৌথ প্রযোজনার ছবি নির্মাণ হচ্ছে। ভারত আমাদের ১৯৭১ সালে অনেক উপকার করেছে, এটা আমরা কখনো ভুলতে পারব না। কিন্তু ভাই আমি যে ভাত খাই সেই খাবারের প্লেট যদি কেউ কেড়ে নিতে চান তাহলে কিন্তু আমি বিদ্রোহ করব। আমার কাছে এখন মনে হচ্ছে বর্তমানে আমার ভাত কেউ কেড়ে নিতে চায়। এটা তো মেনে নিতে পারি না। যখনই এটা দেখব তখনই আমি সংগ্রামী হবো। বর্তমানে যৌথ প্রযোজনার ছবিতে একটা অংশের বেশকিছু লোক রয়েছে যারা চিরকাল আমাদের ইন্ডাস্ট্রিকে ধ্বংস করতে চেয়েছে। আর এজন্য কিছু লোককে ব্যবহার করতে চেয়েছে। সিনেমা হলের মালিকদের এসব বোঝানো হয়েছে। তাদের বুঝিয়েছে, আপনাদের ব্যবসা হবে, আরও অনেক সুবিধা আছে।
তবে আমাদেরও দোষ আছে। কারণ আমাদের সময়ে রাজ্জাক, আলমগীর, ওয়াসিম, জসিম বা আমার ছবি সিনেমা হলে লালবোর্ড বা হাউজফুল ঝুলত। এখন তো আমরা সেই ধরনের ছবি বানাতে পারছি না। তবে তাই বলে যৌথ প্রযোজনার ছবি আইন ভঙ্গ করে আনব তা আমি মানতে চাই না। এটা অভিশাপই ডেকে আনছে। আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে ভালো বাজেট, ভালো গল্প ও সংলাপ লেখার লোকের অভাব আছে, এসব বিষয়ে আরও সজাগ হতে হবে।
চম্পা
যৌথ প্রযোজনার ছবি হলে দুই দেশের সমান শিল্পী তো থাকা উচিত। লোকেশনটা গল্পের উপর নির্ভর করলেও যৌথ প্রযোজনার ছবিতে সঠিক নিয়ম মেনে আর্টিস্ট নেয়া উচিত। কারণ, আমাদের দেশের অভিনয়শিল্পীরা তো হেলাফেলা করার মতো না। আর যেহেতু যৌথ প্রযোজনার ছবির নাম আসছে তাই শিল্পীদের অধিকার সমান সমান হওয়া উচিত। কিন্তু এসব দিকে বেশি নজর দেয়া হচ্ছে না। আমরা দেখতে পাচ্ছি বেশিরভাগ শিল্পী ওপারের থাকছে। এদেশের আর্টিস্টরা বেশি থাকছেন না যৌথ প্রযোজনার ছবিতে। দু’দেশের একসঙ্গে নিয়ম নীতিমালাটা ভালোভাবে মেনে চললে আমাদের টেকনিশিয়ান, আমাদের শিল্পীরা যেমন কিছু শিখতে পারবে ঠিক তেমনি তারাও এদেশে এসে আমাদের কাছে অনেক কিছু শিখতে পারবে। যৌথ প্রযোজনার ছবিতে এসব বিষয়গুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণভাবে দেখা উচিত। অভিযোগ বা তর্ক-বিতর্ক না করে যথাযথ নিয়ম মেনে আমাদের ভালো কিছু ছবি দর্শকদের উপহার দেয়া উচিত।
মোরশেদুল ইসলাম
আমার মনে হয় যৌথ প্রযোজনার ছবি যেভাবে হচ্ছে তাতে বাংলাদেশ খুব একটা লাভবান হচ্ছে না। কারণ আমরা দেখছি ভারতীয় ছবিতে কোনোভাবে বাংলাদেশকে সম্পৃক্ত করে যৌথ প্রযোজনার নামে চালানো হচ্ছে। বেশিরভাগ সময় তাই দেখা যাচ্ছে। কারণ ভারতীয় পরিচালক থাকলেও বাংলাদেশের পরিচালক একজন ‘নামকা ওয়াস্তে’ থাকছে। আর আর্টিস্টের ক্ষেত্রেও বেশিরভাগ ছবিতে ভারতীয় অভিনয়শিল্পীরা বেশি থাকছে। সরকারিভাবে যে নীতিমালা রয়েছে সেটা অনেকাংশে ঠিকভাবে মানা হচ্ছে না। যৌথ প্রযোজনার ছবি আমাদের দেশের জন্য ফলপ্রসূ হতে পারত যদি ঠিকমতো নিয়ম মেনে নির্মাণ হতো। তাই আমাদের দেশীয় চলচ্চিত্রের জন্য এটা আশীর্বাদ না, এক প্রকার ক্ষতিই হচ্ছে বলে মনে করি আমি।
ফরমান আলী
যৌথ প্রযোজনার ছবির যে নীতিমালা ছিল তা আগের নিয়মে নেই। নতুন নীতিমালায় দুজন পরিচালক বসে ঠিক করছেন সবকিছু। এই নিয়ম আসার পর তো সবকিছু হাল্কা হয়ে গেছে। দেখা যাচ্ছে বেশিরভাগ ছবিতে এ পারের পরিচালক নামেমাত্র এবং ওপারের পরিচালক বেশি প্রাধান্য পাচ্ছে। এমন অবস্থায় এখানকার পরিচালকের কিছু করার থাকছে না। এপারের পরিচালক তার স্বকীয়তা বজায় রেখে কাজ করতে পারছেন না। কারণ চলচ্চিত্রের বর্তমান অবস্থাটা এতটাই খারাপ হয়ে গেছে যে, একটা পরিচালক ছবি ধরে রাখার জন্য আত্মবিসর্জন দিতেও রাজি। কিন্তু হওয়া উচিত এখান থেকে কিছু প্রমিনেন্ট আর্টিস্ট থাকবে, ওপারের কিছু প্রমিনেন্ট আর্টিস্ট থাকবে। সেই সঙ্গে এখানকার আর ওপারের পরিচালক একসঙ্গে কাজ করবে। আইন পরিবর্তনের পর এই বিষয়গুলো এখন তো আর নেই। আমাদের দেশের প্রযোজকের চেয়ে ওপারের প্রযোজকের টাকাটা বেশি আসছে। ফলে এখানকার পরিচালকের আর কিছু বলার থাকছে না। তাই অনেক কথা বলে লাভ হচ্ছে না। এমন একটা নীতিমালা দরকার যেখানে আমাদের দেশের বা ইন্ডাস্ট্রির স্বার্থ সংরক্ষণ হবে এবং পাশাপাশি ওই দেশেরও স্বার্থ সংরক্ষণ হবে।
M | T | W | T | F | S | S |
---|---|---|---|---|---|---|
1 | ||||||
2 | 3 | 4 | 5 | 6 | 7 | 8 |
9 | 10 | 11 | 12 | 13 | 14 | 15 |
16 | 17 | 18 | 19 | 20 | 21 | 22 |
23 | 24 | 25 | 26 | 27 | 28 | 29 |
30 | 31 |