বন্ধ চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড (সিইউএফএল) এক বছরেরও বেশি সময় ধরে । ফলে কারখানার হাজার কোটি টাকা দামের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন যন্ত্রপাতি নষ্ট হচ্ছে। এ সুবাধে সংঘবদ্ধ প্রভাবশালী চক্র বেশ কিছু মূল্যবান যন্ত্রপাতি খুলে বিক্রি করে দিয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
জানা যায়, প্রভাবশালী চক্রটি কারখানার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের যোগসাজশে নানা কৌশলে মূল্যবান যন্ত্রপাতি পাচার করে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। অপরদিকে কারখানার যন্ত্রপাতি নষ্ট ও তদারকির কথা বলে বিল তৈরি করছে। এভাবে শত কোটি লোকসানের কবলে পড়ছে পর্যাপ্ত গ্যাসের অভাবে বন্ধ থাকা কারখানাটি।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু তাহের ভুঁইয়া কোন কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান। তিনি বলেন, ঢাকায় আমাদের নির্দিষ্ট বিভাগ আছে। ওই বিভাগ থেকে জেনে নিন। কারখানার ব্যাপারে উদাসিনতা এবং যন্ত্রপাতি লোপাটের ব্যাপারে তিনি বলেন, আমার কিছু বলার নেই।
তবে কারখানার এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, গত এক বছরেরও বেশি সময় বন্ধ থাকায় কারখানাটি শত কোটি টাকার উৎপাদন ক্ষতির কবলে পড়েছে। শুধুমাত্র গ্যাসের অভাবে দেশীয় এই কারখানাটি ধংস হতে চলেছে। শ্রমিকদের পক্ষ থেকে জরুরি ভিত্তিতে গ্যাস সরবরাহের আবেদন জানানো হলেও রাষ্ট্রয়াত্ত এই কারখানাটি নিয়ে কর্তৃপক্ষ উদাসিন। কাফকোর সাথে রেশনিং করেও কারখানাটি চালু করা গেলে এটির শেষরক্ষা হবে।
সূত্র জানায়, দেশের ইউরিয়া সারের চাহিদা মেটানোর জন্য আশির দশকে কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ তীরে চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড (সিইউএফএল) প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৯৮৭ সালের ২৯ অক্টোবর এই কারখানায় ইউরিয়া সার উৎপাদন শুরু হয়। বিসিআইসির নিয়ন্ত্রাণাধীন এই কারখানায় প্রতিদিন গড়ে প্রায় ত্রিশ হাজার বস্তা সার উৎপাদন করা হয়।
যা দিয়ে বৃহত্তর চট্টগ্রাম, বৃহত্তর নোয়াখালী, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, খুলনা, সাতক্ষীরা, পাবনা, বগুড়া, যশোরসহ দেশের সর্বমোট ২৫টি জেলার চাহিদা অনুযায়ী সার সরবরাহ দেয়া হয়। বিসিআইসির আনুমোদিত ডিলারদের মাধ্যমে এই সার সরবরাহ এবং বাজারজাত করা হয়। সিইউএফএল কারখানা দৈনিক প্রায় ৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস ব্যবহার করে সার উৎপাদন করতো। প্রাকৃতিক গ্যাস এ কারখানায় কেবল জ্বালানি হিসেবে নয়, সার উৎপাদনে কাঁচামাল হিসেবেও ব্যবহৃত হয়।
কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রামে গ্যাসের তীব্র হাহাকারের মাঝে ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসে সিইউএফএল কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। বহুজাতিক সার কারখানা কাফকোও একই সাথে বন্ধ করা হলেও পরবর্তীতে কাফকোতে গ্যাস সরবরাহ দেয়া হয়। বর্তমানে কাফকো উৎপাদন চালালেও বন্ধ রয়েছে সিইউএফএল। অথচ কাফকোতে ব্যবহৃত গ্যাস রেশনিং করেই সিইউএফএল কারখানা চালু করা যায়।
সূত্র আরও জানান, কাফকোতে দৈনিক ৫০ মিলিয়ন ঘনফুটের মতো গ্যাস দিচ্ছে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কো¤পানি। ওই গ্যাস টানা কাফকোতে না দিয়ে তিন মাস করে রেশনিং করলে দুইটি কারখানাই চালু থাকে। কাফকোতে তিন মাস উৎপাদন চললে পরবর্তী তিন মাস সিইউএফএল কারখানায় উৎপাদন চালানো যায়। আর প্রক্রিয়াটি একেবারেই সহজ। একটি বাল্ব ঘুরিয়ে দিলেই কাফকো থেকে গ্যাস সিইউএফএল কারখানায় চলে যায়।
শ্রমিক ও কর্মচারীদের অভিযোগ, কারখানা বন্ধ থাকার ফলে কোটি টাকার যন্ত্রপাতি নষ্ট হচ্ছে। আবার এ সুবাধে মূল্যবান যন্ত্রপাতিও পাচার করে দেয়া হচ্ছে। সংঘবদ্ধ প্রভাবশালী চক্র কোটি টাকা লোপাট করছে। বিষয়টি ইতোমধ্যে দুদকও তদন্ত করেছে।
শ্রমিক-কর্মচারীদের ভাষ্য, সিইউএফএল সার কারখানায় প্রতিদিন গড়ে ১৫শ মেট্রিক টনের সমপরিমান তিন হাজার বস্তা সার উৎপাদন হয়। যার বাজার মূল্য দেড় কোটি টাকা। ইউরিয়া সারের বাইরে এই কারখানায় বিপুল পরিমান এ্যামোনিয়াও উৎপাদিত হয়। সব মিলে গত এক বছরেরও বেশি সময়ে প্রায় ৬০০ কোটি টাকার উৎপাদন ক্ষতি হয়েছে।
দুদক সূত্র জানায়, সিইউএফএল এখন লুটপাটের কারখানায় পরিণত হয়েছে। গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে কারখানাটি বন্ধ রাখায় কারখানার যন্ত্রপাতির যে ক্ষতি ও লোপাট হচ্ছে তা ভবিষ্যতের জন্য খুব খারাপ নজির সৃষ্টি করছে। বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে বলেও সূত্র জানায়।