ঝরছে তাজা প্রাণ প্রতিদিনই দেশের সড়কগুলোতে। গতকাল বগুড়া, টাঙ্গাইল, সুনামগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এসব ঘটনায় আহত হয়েছেন আরো অর্ধশতাধিক। বিস্তারিত আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো রিপোর্টে-
বগুড়া প্রতিনিধি জানান, বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলায় দুই বাসের সংঘর্ষে মা-মেয়েসহ ছয়জন নিহত হয়েছেন। গতকাল দুপুরে উপজেলার মোকামতলার কাশিপুর এলাকায় বগুড়া-রংপুর মহাসড়কে রংপুরগামী নাবিল পরিবহন ও ঢাকাগামী খালেক এন্টারপ্রাইজের এ সংঘর্ষে শিশুসহ আরও ২৫ জন আহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ঢাকার মোহাম্মদপুরের ফজলুল করিমের স্ত্রী সৈয়দা মোনোয়ারা (৬৭), বগুড়ার গাবতলী উপজেলার কাগইল সুলতানপুর গ্রামের নইমুদ্দিনের স্ত্রী জুলেখা (৬০), তার মেয়ে মোছা. ডলি (৩৫), দিনাজপুর রামসাগর এলাকার লতিফুর রহমানের মেয়ে নীলা (২৫) ও গাইবান্ধার প্রিয় বালার (৫৫) পরিচয় জানা গেছে। আহতদের মধ্যে এক শিশু ও এক তরুণী বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। অন্যদের রফাতুল্লাহ হাসপাতালসহ বিভিন্ন ক্লিনিকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
গোবিন্দগঞ্জ হাইওয়ে থানার ওসি আবুল বাসার বলেন, বিপরীতমুখী দুই বাসের সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই পাঁচ নারী যাত্রী নিহত নয়। পরে হাসপাতালে নেয়ার পথে আরও এক নারীর মৃত্যু হয়। দুর্ঘটনার পর ওই সড়কে প্রায় এক ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে। পরে বাস দুটি সরিয়ে নেয়ার পর চলাচল স্বাভাবিক হয় বলে জানান তিনি।
কালিহাতী ও ভূঞাপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি জানান, ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের জোকারচর নামক স্থানে গতকাল সকাল ৭টায় একটি মালবাহী ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে ঘটনাস্থলেই ৪ জন নিহত হয়। এতে আহত হয়েছে ১০ জন। নিহতরা হলেন, পাবনার বেড়া উপজেলার শ্যামপুর গ্রামের বোকায়ের ছেলে সোহেল (৩৫), গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার আছাবুর রহমানের ছেলে সুজন (৩৮) ও বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার হাশিমপুর গ্রামের কফিল উদ্দিনের ছেলে আবছার (৬০) অপর একজনের পরিচয় পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আছাবুর রহমান জানান, ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা সিমেন্ট বোঝাই ট্রাক সকাল ৭টায় জোকারচর নামকস্থানে পৌঁছালে সামনের একটি চাকা ফেটে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই ৪ জন নিহত হয় এবং আহত হয় ১০ জন। আহতদের উদ্ধার করে টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত আহতদের পরিচয় পাওয়া যায়নি।
এদিকে, কালিহাতী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা আবু নাসার উদ্দিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারকে ১০ হাজার টাকা করে অনুদান দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, সুনামগঞ্জ-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের জাতুয়া নামক স্থানে একটি যাত্রীবাহী বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে পার্শ্ববর্তী খাদে পড়ে ঘটনাস্থলেই ৩ জন যাত্রী নিহত এবং আরো ২০ জন আহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার দিরাই সরমঙ্গল ইউনিয়নের হাচিমপুর গ্রামের শ্যামল প্রাণের সহধর্মিনী মৌসুমী প্রাণ (২৪),শাল্লা উপজেলার বাহারা ইউনিয়নের মুক্তারপুর গ্রামের জগনানন্দের সহধর্মিনী রাধা রানী (৪৫) ও অপর নিহত যুবকের নাম ও পরিচয় জানা যায়নি।
এ ঘটনায় আরো ২০ জন আহত হয়েছেন। আহতরা হলেন, দিরাই উপজেলার দিরাই সরমঙ্গল ইউনিয়নের হাচিমপুর গ্রামের দীরেশ রায়ের ছেলে বিপুল রায় (২৪), তার বোন পপি রায় (১৮), একই গ্রামের মৃদুল পাল (৪৫), সুনামগঞ্জ পৌর শহরের মো. আবদুল খালিকের ছেলে মো. লুৎফুর রহমান (৩৫), মো. আলী হোসেন (৬০) অজ্ঞাত ও মায়া রানী (৫৮) অজ্ঞাত। বাকি আহতদের নাম ও পরিচয় জানা যায়নি। তবে উল্লেখিত ৭ জনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাদেরকে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
গতকাল বিকাল ৩টায় এ হতাহতের ঘটনাটি ঘটে। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, সিলেট থেকে ছেড়ে আসা (মৌলভীবাজার জ-১১-০২৫৮) একটি যাত্রীবাহী বাস সুনামগঞ্জ আসার পথে ছাতক উপজেলার জাতুয়া নামক স্থানে আসামাত্র বাসটির চালক একহাতে মোবাইল ফোনে কথা বলার সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে পার্শ্ববর্তী খাদে পড়ে এ হতাহতের ঘটনাটি ঘটে। খবর পেয়ে স্থানীয় জয়কলস হাইওয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশগুলি উদ্ধার করে এবং আহতদের বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়। এ ঘটনায় পুলিশ ও এলাকাবাসীর সহায়তায় বাসটির উদ্ধার কাজে অংশ নিলেও ঘাতক ড্রাইভার ও হেলপার পালিয়ে গেছে বলে জানা যায়। এ ব্যাপারে জয়কলস হাইওয়ে পুলিশের এসআই মো. শফিকুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, নিহতদের লাশগুলো উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে।
মৌলভীবাজার প্রতিনিধি জানান, মৌলভীবাজার সিলেট মহাসড়কের কনকপুর এলাকায় দ্রুতগামী বাসের চাপায় নান্টু শীল নামের এক পথচারী নিহত ও আহত হয় ১ জন। মৌলভীবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অকিল উদ্দিন ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল সকাল ১১টার দিকে মৌলভীবাজার থেকে সিলেটগামী হবিগঞ্জ বিরতিহীন নামের একটি যাত্রীবাহী বাস কনকপুর এলাকার সিএনজি পেট্রল পাম্পের রাস্তার পাশে দাঁড়ানো থাকা ওই পথচারীকে চাপা দিলে ঘটনাস্থলে তার মৃত্যু ঘটে। নিহত নান্টু চন্দ্র শীল মনুরমুখ ইউনিয়নের আখাইকুড়া এলাকার সুশীল চন্দ্র শীলের পুত্র। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।
স্টাফ রিপোর্টার, যশোর থেকে জানান, যশোরের চৌগাছায় ট্রা?কের ধাক্কায় ফা?তেমা খাতুন (৫) নামে এক স্কুলছাত্রী নিহত হ?য়ে?ছে। সে য?শোর সদর উপ?জেলার সাতমাইল এলাকার মথুরাপুর গ্রা?মের শিমুল হো?সে?নের মে?য়ে। সে মথুরাপুর প্রাথ?মিক বিদ্যাল?য়ের প্রথম শ্রেণির ছাত্রী। এ ঘটনায় নিহত স্কুলছাত্রীর নানী মঞ্জুয়ারা বেগম (৫৫) ও মা রহিমা বেগম (৩৫) গুরুতর আহত হয়েছেন। তাদেরকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গতকাল দুপু?রে চৌগাছা-বা?রোবাজার সড়?কের ইছাপুর প্রাথ?মিক বিদ্যাল?য়ের সাম?নে এ দুর্ঘটনা ঘ?টে। প্রত্যক্ষদ?র্শী ও একই ঘটনায় আহত মঞ্জুয়ারা বেগম (৫৫) জানান, তি?নি তার মে?য়ে র?হিমা ও নাত?নি ফাতেমাকে নিয়ে আলমসাধুযোগে (শ্যা?লো ইঞ্জিনচা?লিত যানবাহন) আড়পাড়া থে?কে চৌগাছার দিকে যা?চ্ছি?লেন। প?থিম?ধ্যে ইছাপুর প্রাথ?মিক বিদ্যাল?য়ের সাম?নে পৌঁছা?লে পেছন দিক থে?কে এক?টি ট্রাক এ?সে তা?দের গা?ড়ি?কে ধাক্কা দি?লে তাদের বহনকারী আলমসাধুটি রাস্তার পা?শে উ?ল্টে যায়।
এ ঘটনায় মঞ্জুয়ারা বেগম, রহিমা ও ফা?তেমা খাতুন আহত হন। তাদেরকে উদ্ধার করে চৌগাছা উপ?জেলা স্বাস্থ্য কম?প্লে?ক্সে নি?য়ে গে?লে কর্তব্যরত চি?কিৎসক শিশু ফাতেমা?কে মৃত ঘোষণা ক?রেন। চৌগাছা থানার ডিউ?টি অ?ফিসার এএসআই দেবা?শিষ ঘটনার সত্যতা স্বীকার ক?রে ব?লেন, পুলিশ ঘাতক ট্রাকটি আটকের চেষ্টা চলছে। নিহত শিশুর লাশ ময়নাতদন্তের জন্য যশোর জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ থেকে জানান, সিদ্ধিরগঞ্জে কাভার্ডভ্যানের চাপায় আমির হোসেন (৩৫) নামে এক যুবক নিহত হয়েছে। নিহত আমির হোসেন মুন্সীগঞ্জ জেলার টঙ্গীবাড়ি থানার চৌশারচর এলাকার মৃত আয়নাল ফকিরের ছেলে। সে সিদ্ধিরগঞ্জের পাইনাদী নতুন মহল্লার শাপলা চত্বর এলাকায় ভাড়া থাকতো। ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল বিকালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের শিমরাইলের ইউটার্ন এলাকায়।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) নাসির উদ্দিন জানান, আমির হোসেন রাস্তা পারাপারের সময় ঢাকা থেকে কাঁচপুরগামী একটি কাভার্ডভ্যান (ঢাকা মেট্রো-ট-১৮-৩৯৬৭) তাকে চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই সে নিহত হয়। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নারায়ণগঞ্জের ১০০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করেছে। কাভার্ডভ্যানটিকে আটক করা গেলেও চালক ও হেলপার পালিয়ে গেছে।
M | T | W | T | F | S | S |
---|---|---|---|---|---|---|
1 | ||||||
2 | 3 | 4 | 5 | 6 | 7 | 8 |
9 | 10 | 11 | 12 | 13 | 14 | 15 |
16 | 17 | 18 | 19 | 20 | 21 | 22 |
23 | 24 | 25 | 26 | 27 | 28 | 29 |
30 | 31 |