বিশ্বব্যাংক দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশের অগ্রগতির প্রশংসা করেছে । সংস্থাটি জানিয়েছে, গত ছয় বছরে হতদারিদ্র্যের সংখ্যা সাড়ে ১৮ শতাংশ থেকে ১২.৯ শতাংশে নেমেছে। সকালে রাজধানীতে বিশ্বব্যাংক কার্যালয়ে ত্রৈমাসিক অর্থনৈতিক প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে এ কথা জানান বাংলাদেশে সংস্থাটির প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন।

প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ২০১০ সালে যখন দেশে দারিদ্র্যের পরিমাপ করা হয়েছিল তখন দিনে যারা এক দশমিক ২৫ ডলার (বাংলাদেশি টাকায় একশ টাকা) এর কম আয় করে তাদেরকে হতদরিদ্র ধরা হতো। এই হিসাবে সরকারি হিসাবে তখন হতদরিদ্রের সংখ্যা ছিল ১৩ দশমিক এক শতাংশ। কিন্তু এখন বিশ্বে যাদের দৈনিক আয় এক দশমিক ৯০ (বাংলাদেশি টাকায় ১৫২ টাকা) ডলারের নিচে তাদেরকে হতদরিদ্র ধরা হয়। এই হিসাবে তখন বাংলাদেশে হতদরিদ্র ছিল ১৮.৫ শতাংশ। সেটাই এখন কমে হয়েছে ১২.৯ শতাংশ।

জাতিসংঘের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা এসডিজিতে ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশে হতদরিদ্রের সংখ্যা তিন শতাংশে নামিয়ে আনতে বলা হয়েছে। জাহিদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে যে হারে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হচ্ছে সেটা বাড়াতে না পারলে এই এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা যাবে না।

বর্তমান হারে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হলে ২০৩০ সালে বাংলাদেশে হতদরিদ্রের সংখ্যা ৫.৫ থাকবে বলে জানান জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে হলে এর মধ্যে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়িয়ে ৮.৮ শতাংশ করতে হবে।

চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৬.৮ শতাংশ হবে বলেও জানান জাহিদ হোসেন। যদিও বাজেট প্রস্তাবনায় সরকার ৭.২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে।

জাহিদ হোসেন বলেন, জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার না বাড়িয়েও হতদরিদ্যের সংখ্যা কমানোর সুযোগ আছে। সে ক্ষেত্রে অন্তর্ভূক্তিমূলক অর্থনীতি নিশ্চিত করতে হবে যেখানে সব স্তরেই সমান আয় বাড়বে।

বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংকের মুখ্য অর্থনীতিবিদ বলেন, ভারত, পাকিস্তানসহ দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশের তুলনায় বাংলাদেশে দারিদ্রবিমোচনের হার সবচেয়ে ভালো। কেবল এই অঞ্চল নয়, সারা বিশ্বেই দারিদ্রবিমোচনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ঈর্ষণীয় সাফল্য দেখিয়েছে।

১৯৯১-৯২ অর্থ বছরে এদেশের মোট জনগোষ্ঠীর ৫৬. ৭ শতাংশই দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করতো। ২০১০ সালের খানা জরিপ অনুযায়ী দারিদ্যের হার নেমে হয় ৩১.৫ শতাংশে। ২০১৪ সালের জুনে তা আরও কমে ২৫.৬ শতাংশ হয়। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, ২০০৫ সাল থেকে প্রতি বছর দেশে দারিদ্র্যের হার কমছে ১.৭ শতাংশ হারে।

দারিদ্র্য বিমোচনে সরকারের নানা কর্মসূচি চলছে। অতিদরিদ্রদের জন্য বিশেষ খাদ্য ও কর্মসংস্থান কর্মসূচি চলছে। ছাড়াও শিক্ষা বিস্তার ও সামাজিক নিরাপত্তার নানা প্রকল্পও দারিদ্র্যবিমোচনে ভূমিকা রাখছে বাংলাদেশে।

Share Now
December 2024
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031