চট্টগ্রাম: বৈদ্যুতিক তার তৈরি শেষে প্রসিদ্ধ চার কোম্পানির লেবেল লাগিয়ে বাজারজাত করছিল তারা।রেয়াজউদ্দিন বাজারের একটু ভেতরে আল্লাহর দান নামের একটি পুরোনো মার্কেট। দ্বিতল মার্কেটটির দক্ষিণের কোনে ৮ বাই ২০ হাতের একটি কক্ষ। এই কক্ষটিকেই কারখানা বানিয়ে ভেজাল বৈদ্যুতিক তার তৈরি করে আসছিল কিছু অসাধু ব্যবাসায়ী।
তবে শেষ রক্ষা হয়নি। রোববার বিকেলে সেখানে হানা দেয় নগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি টিম। পরে জব্দ করে বিপুল পরিমাণ বৈদ্যুতিক তার এবং তার তৈরির কাঁচামাল ও সরঞ্জাম। সিলগালা করে দেয় কারখানাটি।
সরেজমিনে ঘটনাস্থলে দেখা যায়, ছোট্ট কারখানাটির ভেতর ক্যাবল তৈরির বড় একটি যন্ত্র রয়েছে। কারখানাটির সামনে ও পেছনে দুটি দরজা ও এককোণে একটি জানালা রয়েছে। তবে কারখানাটির দেয়ালে কয়েকটি ছোট ছোট ফুটো সদৃশ্য দেখা গেলেও সেগুলো সিমেন্ট দিয়ে ভরাট করে দেওয়া হয়েছে। কারখানাটির যন্ত্রপাতি পর্যালোচনা করে বুঝা গেছে এখানে দীর্ঘদিন ধরে এভাবে ভেজাল বৈদ্যুতিক তার করা হচ্ছিল।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই ভবনের ভাড়াটিয়া দুই ব্যক্তি বলেন, ‘সারাদিন এই কারখানাটির দরজা-জানালা বন্ধ থাকতো। সবকিছু বন্ধ রেখেই তারা ভেতরে কাজ করতো। এতদিন নেতিবাচকভাবে কিছু ভাবিনি। আজ অভিযান চালিয়ে ভেজাল বৈদ্যুতিক তার উদ্ধারের পরেই বুঝছি এসব দু নম্বরি কাজ করছিল বলেই সবকিছু আড়াল করতে চাইতো।’
উদ্ধার করা বৈদ্যুতিক তারগুলোর গায়ে চারটি প্রসিদ্ধ ক্যাবল তৈরি প্রতিষ্ঠানের নাম লেখা লেবেল লাগানো ছিল। এই চারটি প্রতিষ্ঠান হলো, ইস্টার্ন কেবলস লি., সুপারসাইন ইন্ডাস্ট্রিজ লি., বিআরবি কেবল ইন্ডাস্ট্রিজ লি., ও বিবিএস কেবল ইন্ডাস্ট্রিজ লি.। পাশাপাশি এসব বৈদ্যুতিক তারগুলো এই ভেজাল কারখানায় তৈরি হলেও তারগুলোর গায়ে লাগানো লেবেলগুলোতে ওই চারটি প্রতিষ্ঠানের মূল কারখানার ঠিকানা লেখা ছিল।
নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ কমিশনার (উত্তর) পরিতোষ ঘোষ সাংবাদিকদের বলেন, আমরা বিশ্বস্ত সূত্রে জানতে পারি এখানে দীর্ঘদিন ধরে ভেজাল বৈদ্যুতিক তার তৈরি করা হয়ে আসছিল। পরে তারগুলো চারটি প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করে বাজারজাত করা হচ্ছিল। এই খবরের ভিত্তিতে আমরা অভিযান চালাই। তবে অভিযানের খবর পেয়ে কারখানার মালিক-শ্রমিকরা আগেই পালিয়ে যায়। কারখানাটি দরজা-জানালা বন্ধ ছিল। আমারা জানালা ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করে তৈরিকৃত বৈদ্যুতিক তার ও কাঁচামাল জব্দ করি। পরে পাশের আরেকটি গোডাউন থেকেও বিপুল পরিমাণ তার এবং কাঁচামাল জব্দ করি। আমাদের অভিযান চলছে। জড়িতদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হচ্ছে।’
এই পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘তারগুলো খুবই নিম্নমাণের। কিন্তু তারগুলোর গায়ে চারটি প্রতিষ্ঠানের লেবেল লাগানোতে সাধারণ মানুষ তা ধরতে পারবে না। বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট, কিংবা আগুণের জন্য এই নিম্নমাণের তারই কারণ হতে পারে বলে আমি মনে করছি।