বছরের পর বছর একজন শিক্ষার্থী পাস করেনি বা নির্ধারিত আসনের এক-তৃতীয়াংশ আসন পূরণ করতে পারেনি এরকম প্রায় ১ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমপিও বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষামন্ত্রণালয়। গতকাল সচিবালয়ের এই সংক্রান্ত এক জরুরি বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। দায়িত্বশীল সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, এসএসসি ও এইচএসসি ভর্তিতে নির্ধারিত আসনের এক-তৃতীয়াংশ এবং পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেও ১০ ভাগ শিক্ষার্থী পাস করতে পারেনি এরকম প্রতিষ্ঠানের তালিকা তৈরি শুরু করেছে শিক্ষামন্ত্রণালয়। এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া যায় তা নিয়ে গতকাল বৈঠকে বসেন শিক্ষামন্ত্রী। সেখানে দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে প্রায় ১,০০০ হাজার প্রতিষ্ঠানের সম্ভব্য তালিকা দেয়া হয় বিভিন্ন বোর্ড থেকে। গত কয়েক বছরের অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানের ভর্তি ও পাসের তথ্য নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। একই সঙ্গে শিক্ষার্থীর চেয়ে শিক্ষক বেশি এরকম প্রতিষ্ঠানের তথ্য সংগ্রহ করা হবে।
বিষয়টি স্বীকার করে গতকাল সন্ধ্যায় শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ মানবজমিনকে বলেন, যুগের পর যুগ একজন শিক্ষার্থীও পাস করতে পারেনি কিংবা পরীক্ষা দিয়ে ৯০ ভাগের বেশি শিক্ষার্থী ফেল করছে। এদের দিনের পর দিন এভাবে চলতে দেয়া যায় না। তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। আজকের (গতকাল) বৈঠকে তাদের বিরুদ্ধে কী ধরনের ব্যবস্থা নেয়া যায় তা আলোচনা হয়েছে।
বৈঠকে উপস্থিত একজন কর্মকর্তা বলেন, এসব প্রতিষ্ঠান পুরোপুরি রাজনৈতিক আশ্রয়ে অনুমোদন ও এমপিওভুক্তি হয়েছে। তিনি বলেন, নির্ধারিত শর্ত পূরণ না করায় বোর্ড তাদের অনুমোদন না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও মন্ত্রণালয় শর্ত শিথিল করে দেয়। তখন বোর্ড বাধ্য হয়ে তাদের অনুমোদন দিতে বাধ্য হয়। এর মধ্যে কিছু প্রতিষ্ঠানে পুরোপুরি আর কিছু আংশিক এমপিওভুক্ত। বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকেরা নিয়মিত বেতন পান। এ ধরনের প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী না থাকলেও শিক্ষক নিয়োগ করে লাখ লাখ টাকার বাণিজ্য হওয়ার অভিযোগ আছে। শতভাগ অনুত্তীর্ণ হওয়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোনো কোনোটিতে শিক্ষার্থীর চেয়ে শিক্ষক-কর্মচারী বেশি বলে মন্ত্রণালয়ের কাছে তথ্য আছে। লেখাপড়ার পরিবেশ না থাকায় শিক্ষার্থীরা এসব প্রতিষ্ঠানে ভর্তিও হতে চায় না।
বৈঠকে সবাই একমত হন, এসব প্রতিষ্ঠানকে এভাবে আর চলতে দেয়া যায় না। তাদের তথ্য দ্রুত সময়ে সংগ্রহ করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বৈঠকে সৃজনশীল প্রশ্ন বাতিল এবং গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নেয়ার আন্দোলনের বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষামন্ত্রী। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সরকারি কলেজ একভুক্ত হওয়া বিষয়টি আলোচনা হয়েছে। বিসিএস শিক্ষকদের কর্তব্যের অবহেলা, শুধু ঢাকা আসার প্রবণতার বিষয়গুলো কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায় তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এছাড়াও শিক্ষক প্রশিক্ষণ, শিক্ষার মানোন্নয়ন, শিক্ষকদের নৈতিকতার চরম অবক্ষয়, বিদেশ ভ্রমণ কমানো, শিক্ষা আইন, অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল, ইউজিসি আইন, মাধ্যমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে গৃহীত ব্যবস্থা, উপজেলায় মাধ্যমিক শিক্ষা কমিটি গঠন ও নিয়মিত পরিদর্শনের জন্য নীতিমালা ও পদ্ধতি তৈরি অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিকের আওতায় হস্তান্তর করায় সৃষ্ট সমস্যা/জটিলতা, অবকাঠামো উন্নয়নের প্রকল্প, সকল প্রকল্প বাস্তবায়নের অগ্রগতি নিয়ে বৈঠকে বিশেষ আলোচনা হয়েছে।
উল্লেখ্য, চলতি বছর সাধারণ ৮টি, মাদরাসা, কারিগরি বোর্ডের অধীনে ৮ হাজার ৩৪৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ১২ লাখ ৩ হাজার ৬৪০ জন পরীক্ষা দিয়ে পাস করেছেন ৮ লাখ ৯৯ হাজার ১৫০ জন। এরমধ্যে ৮৪৮টির সব শিক্ষার্থীই পাস করেছেন। অবশ্য একজন পরীক্ষা দিয়ে একজন পাস করেছেন, এমন কিছু প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। একজনও পাস করেনি এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২৫টি। তার মধ্যে তিনটি ঢাকা বোর্ডের, আটটি রাজশাহী বোর্ডের, আটটি দিনাজপুর বোর্ডের, একটি যশোর বোর্ডের ও পাঁচটি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ডের অধীনে। গত বছর ৫৬ প্রতিষ্ঠানে একজন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়নি। এর আগে বছর সংখ্যাও ছিল প্রায় এর কাছাকাছি।
M | T | W | T | F | S | S |
---|---|---|---|---|---|---|
1 | ||||||
2 | 3 | 4 | 5 | 6 | 7 | 8 |
9 | 10 | 11 | 12 | 13 | 14 | 15 |
16 | 17 | 18 | 19 | 20 | 21 | 22 |
23 | 24 | 25 | 26 | 27 | 28 | 29 |
30 | 31 |