গত ৫ বছরে এ খাতে ব্যয় করা হয়েছে ২২২ কোটি টাকা।২০১১ সালে অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে উদ্বোধন করা হয় দোয়েল ব্র্যান্ডের ল্যাপটপ প্রকল্পের। আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেয়া না হলেও আপাতত বন্ধ রয়েছে দোয়েল ল্যাপটপ উৎপাদনের কাজ। মাত্র কয়েক বছরেই প্রকল্পটি মুখ থুবড়ে পড়েছে। টেলিফোন শিল্প সংস্থা (টেশিস)’র নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্পটির যাত্রা শুরু হয়। অর্থ ও মানসম্মত পণ্য তৈরি করতে ব্যর্থ হওয়ায় প্রকল্পটির এ অবস্থা বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া প্রকল্পটির সঙ্গে জড়িতদের অনিয়মের বিষয়টিও অনেকটা ওপেন সিক্রেটে পরিণত হয়েছে। কম দামে গ্রাহকদের হাতে ল্যাপটপ পৌঁছে দেয়ার উদ্দেশ্যে প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়। কিন্তু সে উদ্দেশ্য সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে বলে মনে করেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। তারা জানান, সরকার যদি এ প্রকল্পে আরো মনোযোগ দিতো তাহলে সবচেয়ে লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করতো। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ৫ বছরে দোয়েল ল্যাপটপ প্রকল্পের অধীনে ৬২ হাজার ২৪৫টি ল্যাপটপ উৎপাদন করা হয়েছে। এর মধ্যে বিক্রি করা হয়েছে ৫৩ হাজার ৭৫০টি। এখন পর্যন্ত অবিক্রীত রয়েছে ৮ হাজার ৪শ’ ৯৫টি ল্যাপটপ। এর মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে বিক্রি করা হয়েছে ২৩ হাজার ৩৩১টি, সেনাবাহিনীতে ২ হাজার ৭৯৯টি, ডাক বিভাগে ১৩ হাজার ৪৮৫টি, এটুআই প্রকল্পে ৮০টি। এছাড়া বিভিন্ন সরকারি অফিসে বিক্রি করা হয়েছে ১৩ হাজার ৭১৬টি। এ প্রসঙ্গে রোববার সংসদে ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম লিখিত প্রশ্নোত্তরে জানান, টেলিফোন শিল্প সংস্থা (টেশিস)-এর নিজস্ব অর্থায়নে এ পর্যন্ত ২২২ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। এর বিপরীতে এ পর্যন্ত ল্যাপটপ বিক্রি করা হয়েছে ২২৪ কোটি টাকার। প্রতিমন্ত্রী জানান, দেশে স্বল্প মূল্যে ল্যাপটপ সংযোজন/উৎপাদন ও বিপণন করতে প্রধানমন্ত্রী ২০১১ সালের ১১ই অক্টোবর এর উদ্বোধন করেন। টেশিস এ পর্যন্ত ১১টি মডেলের দোয়েল ল্যাপটপ উৎপাদন/সংযোজন করেছে। তিনি জানান, আরো উন্নততর কোর আই সেভেন প্রসেসরসমৃদ্ধ দোয়েল লাপটপের পরবর্তী মডেল বাজারজাতকরণের চেষ্টা চলছে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বর্তমানে সারা দেশে দোয়েল ল্যাপটপের বিক্রয়োত্তর সেবা দিতে ৭টি বিভাগীয় শহরসহ টেশিসের ১৪টি বিক্রয় ও সেবাকেন্দ্র খোলা হয়েছে। এছাড়া, ওয়েববেইজড, হেল্প ডেস্ক, ওয়েববেইজড মোবাইল হেল্প ডেস্ক, ওয়েবসাইট, ই-মেইল এবং নির্ধারিত মোবাইলের মাধ্যমে দ্রুত বিক্রয়োত্তর সেবা দেয়া হচ্ছে। এদিকে মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, দোয়েল ল্যাপটপ বাজারজাত করার পরপরই অতিরিক্ত গরম হয়ে যাওয়া, বেশিক্ষণ চার্জ না থাকা, হ্যাং হওয়া, অপারেটিং সিস্টেম ঠিকমতো কাজ না করাসহ বিভিন্ন অভিযোগ আসতে থাকে। চারটি মডেলের প্রথমটিতে (প্রাইমারি) সমস্যা থাকায় দোয়েল ল্যাপটপের উৎপাদক প্রতিষ্ঠান টেশিস এক সময় উৎপাদন বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়। পরবর্তীতে অবশ্য আবার চালু হয় দোয়েলের উৎপাদন। জানা গেছে, বর্তমানে দোয়েল ল্যাপটপের উৎপাদন বন্ধ রাখা হয়েছে। এজন্য পুঁজির অভাবকেই দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ এবং দেশের নিজস্ব ব্র্যান্ডের দোয়েল ল্যাপটপ তৈরির ঘোষণা দেয়া হলেও এর জন্য সরকার কোনো বরাদ্দ দেয়নি। ধারকর্জ করে প্রকল্প চালু হয়। যদিও বরাবরই ধারের টাকা ফেরত দেয়ার বিষয়ে চাপ ছিল টেশিসের ওপরে। সংশ্লিষ্টরা জানান, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল)-এর কাছ থেকে ৪৫ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে দোয়েল ল্যাপটপ প্রকল্প শুরু হয়। উদ্বোধনের পর থেকে প্রথম ১৭ মাসে মাত্র ২৫ হাজার ল্যাপটপ তৈরি করে টেশিস। সক্ষমতা অনুযায়ী এই সংখ্যা হওয়ার কথা ছিল ১ লাখের বেশি। কিন্তু চাহিদা না থাকায় উৎপাদনের পরিমাণ বাড়ানো যায়নি। এর পরেই ঋণের টাকা ফিরিয়ে নিয়ে যায় বিটিসিএল। মূলত তখন থেকেই শুরু হয় আর্থিক অনটন।
M | T | W | T | F | S | S |
---|---|---|---|---|---|---|
1 | ||||||
2 | 3 | 4 | 5 | 6 | 7 | 8 |
9 | 10 | 11 | 12 | 13 | 14 | 15 |
16 | 17 | 18 | 19 | 20 | 21 | 22 |
23 | 24 | 25 | 26 | 27 | 28 | 29 |
30 | 31 |