প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের আগামী জাতীয় সম্মেলনে কাউন্সিলররা তাকে ছাড়া অন্য কাউকে সভাপতি নির্বাচন করলে তিনি খুশি হবেন বলে যে মন্তব্য করেছেন , একে রাজনীতি ও গণতন্ত্রের জন্য ইতিবাচক বলে মনে করছেন বিশিষ্টিজনেরা। তাদের ভাষ্য, প্রধানমন্ত্রী এই বক্তব্য দিয়ে দলে গণতন্ত্রকে আরও সুসংহত করতে চাইছেন। রাজনীতিতে নতুন এক মাত্রা সৃষ্টির ইঙ্গিত দিয়েছেন।
আজ রবিবার গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলন প্রধানমন্ত্রী একজন সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘কাউন্সিলররা অন্য কাউকে সভাপতি নির্বাচিত করলে আমিই সবচেয়ে বেশি খুশি হব। তারা (কাউন্সিলর) যদি আমাকে রিটায়ার্ড করার সুযোগ দেন তাহলে আমি খুশি হতাম।’ প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক ব্রিটেন, কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্র সফর নিয়ে সংবা সম্মেলনটি হয়।
প্রধানমন্ত্রীর ওই মন্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক ঢাকাটাইমসকে বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের মাধ্যমে তার গণতান্ত্রিক মন-মানসিকতার প্রকাশ হয়েছে। তিনি (প্রধানমন্ত্রী) এমন বক্তব্য দিয়ে দলের কাউন্সিলরদের নেতৃত্ব নির্বাচনে স্বাধীন মত প্রকাশেরও একটি পরামর্শ দিয়েছেন।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক গোবিন্দ চক্রবর্তী প্রধানমন্ত্রীর ওই বক্তব্যে গণতান্ত্রিকতার ইঙ্গিত দেখছেন। তিনি বলেন, “আমার মনে হয় প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য কথার ছলে হলেও এর একটি বড় ইঙ্গিত রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর বয়স একটি বড় বিবেচ্য বিষয়। দলের নেতৃত্বে নতুন কাউকে চিন্তা করার জন্য তিনি দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে এ কথা বলতে পারেন।”
এক প্রশ্নের জবাবে গোবিন্দ চক্রবর্তী বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যকে আমি সাধুবাদ জানাই। তিনি সরকার-প্রধান আছেন। এখন দলের রাজনীতিতে অন্য কেউ এলে আওয়ামী লীগ আরও বেশি গতিশীল হবে।”
তবে বয়স বাড়লেও আওয়ামী লীগে শেখ হাসিনার কোনো বিকল্প আপাতত দেখছেন না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম।
এই বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ঢাকাটাইমসকে বলেন, “আমার মনে হয় তিনি (প্রধানমন্ত্রী) চাইছেন আস্তে আস্তে অবসরে যাবেন। তবে এখনই এটা সম্ভব নয়। আওয়ামী লীগে তার কেনো বিকল্প নেই। তিনি যে কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন তা বাস্তবায়ন করতে অন্য কেউ সাহস দেখাতে পারবেন না।’
সৈয়দ মনজুরুল আরো বলেন, ‘তবে তিনি হয়তো একটু ক্লান্তির কথা বলতে পারেন। ৭০ বছরের একজন মানুষ তো একটু ক্লান্ত হতেই পারেন। কিন্তু তার সমকক্ষ কেউ আওয়ামী লীগে নেই। সর্বগ্রহণযোগ্য ব্যক্তি তিনিই।”
এক প্রশ্নের জবাবে সৈয়দ মনজুরুল বলেন, “২০১৯ সালের নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই নির্বাচন শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই হতে হবে। তবে আমার মনে হয় আওয়ামী লীগের বিকল্প নেতৃত্ব নিয়ে ভাবতে হবে। একজন মানুষের ওপর নির্ভরতা দীর্ঘ মেয়াদে সুফল বয়ে আনবে না। আওয়ামী লীগে এখন থেকেই সেই ভাবনা শুরু হওয়া উচিত। প্রধানমন্ত্রী হয়তো সেই ভাবনারই ইঙ্গিত দিয়েছেন।”