আজ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নিরাপত্তা সংলাপ। ঢাকায় বসছে দ্বিপক্ষীয় বাৎসরিক সংলাপের পঞ্চম ওই আসর। এ উপলক্ষে মার্কিন কর্মকর্তারা গতকালই বাংলাদেশে পৌঁছেছেন। কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, ঢাকা-ওয়াশিংটন উভয়ের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়াবলী শুধু নয়, এ অঞ্চলের শান্তি, স্থিতিশীলতা নিয়েও আলোচনা হবে সেখানে। সংলাপে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নিরাপত্তা সহযোগিতায় গত চার বছর ধরে চলা আলোচনার ধারাবাহিকতা থাকছে জানিয়ে কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, সেখানে বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ ও সহিংস-চরমপন্থার সম্ভাব্য উত্থান বিশেষ করে বাংলাদেশে সামপ্রতিক সময়ে জঙ্গিদের বিভিন্ন চাঞ্চল্যকর ঘটনার প্রেক্ষাপটে ওয়াশিংটন প্রস্তাবিত ‘সহযোগিতার প্রস্তাব’ মুখ্য আলোচ্য হতে পারে। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭১তম সাধারণ অধিবেশনের পরপরই অনুষ্ঠেয় ওই সংলাপে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের আলোচ্যসূচি প্রায় চূড়ান্ত। বাংলাদেশে সহিংস-চরমপন্থিদের ভয়ঙ্কর বিভিন্ন হামলা ঠেকানোর বিষয়ে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরো ‘সুনির্দিষ্ট’ করণের তাগিদ থাকবে উভয় পক্ষের। বাংলাদেশে মার্কিন মিশনের কর্মকর্তা জুলহাজ মান্নান বন্ধুসহ নিজ বাসায় নির্মমভাবে খুন হওয়া এবং রাজধানীর কূটনৈতিক জোনের হলি আর্টিজান রেস্তরাঁয় স্মরণাতীতকালের নিকৃষ্টতম জঙ্গি হামলার পর এখানে সম্ভাব্য উগ্রপন্থিদের উত্থান ঠেকানো এবং তাদের নেটওয়ার্ক ভাঙতে ঢাকাকে ওবামা প্রশাসনের তরফে সর্বোতভাবে সহযোগিতার প্রস্তাব দেয়া হয়। প্রস্তাবটি নিয়ে আলোচনায় মার্কিন সহকারী মন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়ালসহ স্টেট ডিপার্টমেন্টের গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তারা ঢাকায় সিরিজ সফর করেন। ওই আলোচনার মধ্যেই এক ঝটিকা সফরে (গত ২৯শে আগস্ট) ঢাকা আসেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী কেরির সফরটি রাজনৈতিক (পলিটিক্যাল ভিজিট) কারণে তাৎপর্যপূর্ণ হলেও বাংলাদেশের নেতৃত্বের সঙ্গে উভয় দেশের অভিন্ন শত্রু সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নিয়ে তিনি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করে যান। এখানকার (স্থানীয়) জঙ্গিদের সঙ্গে ভিনদেশি জঙ্গিদের যোগসূত্রের বিষয়ে স্পষ্ট বার্তা ছিল ঢাকায় দেয়া তার বক্তৃতায়। এ ইস্যুতে ঢাকা-ওয়াশিংটন সহযোগিতা আরো জোরদারের তাগিদও ছিল তার। কর্মকর্তারা বলছেন, বাংলাদেশে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ যাতে শিকড় বিস্তার করতে না পারে এবং স্থানীয় ও আঞ্চলিক জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে আন্তর্জাতিক জঙ্গিদের যোগসূত্র বা নেটওয়ার্ক ভাঙাই এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ। সহিংস-চরমপন্থিদের বিষয়ে আগাম তথ্য পাওয়াসহ তাদের যে কোনো অপকর্ম ঠেকাতে আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা নেয়ার বিষয়টি ঢাকার সক্রিয় বিবেচনায় রয়েছে। বাংলাদেশ এরই মধ্যে জঙ্গি দমনে বিভিন্ন অভিযান পরিচালনা করেছে, যা সদ্য সমাপ্ত জাতিসংঘ অধিবেশনসহ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে প্রশংসিত হয়েছে। সহিংস-উগ্রপন্থা দমনে বাংলাদেশের চলমান উদ্যোগে সহায়তা দিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ যেসব প্রস্তাব দিয়েছে সরকারের নীতিনির্ধারণী মহলে তা পর্যালোচনা হচ্ছে। ‘প্রয়োজনের নিরিখে বিদেশি সহায়তা’ নেয়ার বিষয়ে সরকার ইতিবাচক রয়েছে। পররাষ্ট্র দপ্তরের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের মতে, বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র নিরাপত্তাবিষয়ক আজকের সংলাপে ওয়াশিংটনের কর্মকর্তারা তাদের সহযোগিতার সম্ভাব্য প্রস্তাবগুলোর বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান জানতে চাইবেন। এ নিয়ে তাদের তরফে এরই মধ্যে আভাস মিলেছে জানিয়ে সংলাপ প্রস্তুতির সঙ্গে যুক্ত দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা মানবজমিনকে বলেন, সংলাপে নিরাপত্তা সহযোগিতায় দুই দেশের মধ্যকার যাবতীয় ইস্যু নিয়ে খোলামেলা কথা হয়। নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা-পর্যালোচনা ও মতবিনিময়ে এটিই নিয়মিত এবং সর্বোচ্চ ফোরাম। সেখানে বিস্তৃত পরিসরে দ্বিপক্ষীয় নিরাপত্তা সহযোগিতা, বৈশ্বিক নিরাপত্তা, শান্তিরক্ষা কার্যক্রম, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ মোকাবিলার চলমান সহযোগিতা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। নিরাপত্তা সংলাপে বাংলাদেশ মানবিক নিরাপত্তা বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এতে বন্যা, ঘূর্ণিঝড়ের মতো নিরাপত্তা ঝুঁকি মোকাবিলার কৌশল এবং সহযোগিতা নিয়েও সেখানে আলোচনা হতে পারে। সংলাপে সামরিক-বেসামরিক বিভিন্ন সহযোগিতা, বৈশ্বিক শান্তিরক্ষায় অংশীদারিত্ব, যৌথ সামরিক অনুশীলন ও বিনিময়, সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধ এবং নিরাপত্তা বিষয়ে সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে আলোচিত হয় জানিয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, এবারের নিরাপত্তা সংলাপে কৌলশগত অগ্রাধিকারমূলক ইস্যু এবং আঞ্চলিক বিষয়গুলোও আলোচনায় স্থান পেতে পারে। সঙ্গত কারণেই নিরাপত্তা ইস্যুতে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এ অঞ্চলের অন্যান্য দেশের সম্পর্কের বিষয়টিও আলোচনায় আসবে। সূত্র মতে, সংলাপে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি বিল মুনা হান দেশটির প্রতিনিধি দলে নেতৃত্ব দেবেন। মার্কিন প্রতিনিধি দলে বেশ ক’জন বেসামরিক কর্মকর্তা এবং সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিনিধি থাকছেন। সংলাপে অতিরিক্ত পররাষ্ট্র সচিব কামরুল আহসান বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন। ওই দলে পররাষ্ট্র, স্বরাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তা, সশস্ত্র বাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা থাকছেন।