স্বাগত জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আফগানিস্তানের সঙ্গে সিরিজ জয়ের জন্য বাংলাদেশ ক্রিকেট টিমকে, আজ রবিবার স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র(স্মার্ট কার্ড) বিতরণের মধ্যদিয়ে দেশ এক নতুন যুগে প্রবেশ করলো। এ সময় তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকেও স্মরণ করেন।
রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে স্মার্ট আইডি কার্ড বিতরণ কর্মসূচির উদ্বোধন শেষে প্রধানমন্ত্রী গত নির্বাচনী ইশতিহারের কথা স্মরণ করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা তখনই ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার অঙ্গীকার করেছিলাম। সেই অঙ্গীকার আজ একে একে বাস্তবায়িত হচ্ছে।’
প্রধানমন্ত্রী অতীতের ভুয়া ভোটার তালিকার কথা স্মরণ করে বলেন, ‘একসময় ভোটার তালিকায় এক কোটি ৪০ লাখ ভুয়া ভোটারের সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল। সেখান থেকে বের হয়ে আসার জন্যই জাতীয় পরিচয়পত্রে প্রবেশ করি আমরা। সেই জালিয়াতি থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য একটা তথ্যভাণ্ডার গড়ে তুলি। আজ স্মার্ট কার্ড বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধনের মধ্যদিয়ে সেই কার্যক্রম আরও একধাপ এগিয়ে গেল।’ প্রধানমন্ত্রী তার বক্তৃতায় স্মার্ট কার্ডের নানামুখি ব্যবহারের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘এই কার্ড অপরাধী শনাক্ত করা এবং তাদেরকে দ্রুত গ্রেপ্তার করা অনেক সহজ করে দিবে।’
পুরনো পরিচয়পত্র ফিরিয়ে নিয়ে ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সব নাগরিকের হাতে স্মার্টকার্ড বিতরণের লক্ষ্য ঠিক করেছে নির্বাচন কমিশন। প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের পর সোমবার থেকে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে এবং প্রত্যন্ত এলাকা কুড়িগ্রামে এই কার্ড বিতরণ শুরু হবে।
সকালে অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত হয়েই প্রধানমন্ত্রী আইরিশের প্রতিচ্ছবি এবং দশ আঙ্গুলের ছাপ দেন। পরে পুরনো ভোটার আইডি কার্ডটি ফোরত দেন তিনি।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের স্মার্ট কার্ডটি প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের কাছে হস্তান্তর করেন।
এরপর প্রধান নির্বাচন কমিশনার প্রধানমন্ত্রীর হাতে তার স্মার্টকার্ডটি তুলে দেন। কাজী রকিব পরে বঙ্গভবনে গিয়ে রাষ্ট্রপতির স্মার্টকার্ডটিও হস্তান্তর করবেন।
বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সদস্য মাশরাফি বিন মুর্তজা, মুশফিকুর রহিম, সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মাহমুদ উল্লাহ রিয়াদ, মুস্তাফিজুর রহমান, সাব্বির রহমান, তাসকিন আহমেদ, সৌম্য সরকার, নাসির হোসেন, ইমরুল কায়েস ও তাইজুল ইসলাম এ অনুষ্ঠানেই প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তাদের স্মার্টকার্ড বুঝে নেন। পুরনো ভোটার আইডি তারা প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে ফিরিয়ে দেন।
নির্বাচন কমিশনের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যে তথ্যভাণ্ডার এরই মধ্যে গড়ে তোলা হয়েছে, তার নিরাপত্তায় সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে। এ ব্যাপারে যতধরনের নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা রয়েছে তার যেন প্রয়োগ করা হয়।’ আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এর ফলে অফ-লাইন ও অন-লাইনে নাগরিকদের পরিচয় জানার বিষয়টি আরও সহজ হবে। পাসপোর্ট করতে এখন এর পুলিশ ভেরিভিকেশনের প্রয়োজন হবে না। যাদের বয়স ১৮ বছরের কম তাদেরকেও যাতে পরিচয়পত্র দেয়া যায় সে বিষয়টি নিয়ে ভাবা হচ্ছে। এ বিষয়ে একটা নীতিগত সিদ্ধান্তও হয়েছে। এ নিয়ে সরকার কাজ করছে। এমনকি যারা কারগারে রয়েছে তাদেরও একটা আলাদা পরিচয়পত্র থাকা দরকার, যাতে করে পরবর্তীতে তাদেরকে অপরাধের জন্য ধরা সহজ হয়।’
ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে নানা সাফল্যের দিক তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ আজ বাস্তব। আমরা স্যাটেলাইট কর্মসূচিও হাতে নিয়েছি। এটা সফল হলে বাংলাদেশ আরও একধাপ এগিয়ে যাবে।’ তিনি বলেন, ‘প্রযুক্তির ব্যবহারের যেসব সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে সেটার সর্বোচ্চ ব্যবহার আমাদেরকে করতে হবে। আধুনিক জীবন মান নিশ্চিত করতে সরকার মনযোগ দেবে। আমাদের টার্গেটই হচ্ছে মানুষে জীবন মানের উন্নয়ন।’
২০৪১ সালের মধ্যে আমরা উন্নত দেশে পরিণত হবো-উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার হাত পেতে নয়, নিজস্ব সম্পদ ব্যবহার করেই আমরা উন্নত দেশে পরিণত হবো।’ বক্তৃতার শেষ পর্যায়েও প্রধানমন্ত্রী ক্রিকেট খেলোয়ারদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ‘আমি কিন্তু গতকাল খেলা দেখেছি।’