কোটি কোটি টাকা কর ফাঁকি দিয়ে দেশে আনা এই গাড়িগুলোর পেছনে ছুটছেন শুল্ক গোয়েন্দারা। ঘুম হারাম হয়ে গেছে সিলেটের বিলাসবহুল গাড়ির মালিকদের।শুল্ক গোয়েন্দারা সিলেটে ৩০ গাড়ির খোঁজে মাঠে নেমেছেন। প্রতিদিনই গাড়ির খোঁজে চলছে অভিযান। এ কারণে বিলাসবহুল গাড়ির মালিকরা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। কেউ কেউ অজ্ঞাত স্থানে গাড়িগুলো রেখে চলে যাচ্ছেন প্রবাসেও। সিলেটে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের কার্যক্রম শুরুর কয়েক মাসের মধ্যে এ পর্যন্ত ৭টি বিলাসবহুল গাড়ি আটক করা হয়েছে। কিন্তু কোনোটিরই মালিককে তারা খুঁজে পাননি। পরিত্যক্ত স্থানে গাড়িগুলো পেয়েই তারা আটক করেন। সর্বশেষ গতকাল সোমবার সিলেটে তিনটি গাড়ি উদ্ধারের তথ্য দিলেন শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর, ঢাকার মহাপরিচালক ড. মইনুল খান। প্রায় ৮ কোটি টাকা মূল্যের ওই তিনটি গাড়ির মধ্যে মিতসুবিসি, জাগুয়ার এস টাইপ ও নিশান ৩০০-জেড এক্স মডেলের গাড়ি রয়েছে বলে জানান তিনি। প্রবাসীদের শহর সিলেট। এখানে গাড়ি ও বাড়ির দাপট দেখানো নিয়ে চলে প্রতিযোগিতা। দামি গাড়ি ও বাড়ির দাপট দেখাতে প্রবাসীরা দেশে এসে প্রতিযোগিতায় শামিল হয়। এতে কোটি কোটি টাকা মূল্যে বাড়ি বানানোর পর তারা লন্ডন কিংবা মধ্যপ্রাচ্য হয়ে বিশ্বের উন্নতমানের ব্রান্ডের বিলাসবহুল গাড়ি নিয়ে চড়েন সিলেটে। এসব গাড়ির অধিকাংশই সড়ক পথে ভারত হয়ে দেশে প্রবেশ করে। আর কিছু কিছু গাড়ি চট্টগ্রাম পোর্ট দিয়ে ঢুকানো হয়। শুল্ক গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, অনেক গাড়ির মালিকই ৬ মাসের আন্তর্জাতিক কারনেট সুবিধা নিয়ে বাংলাদেশে গাড়িগুলো নিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে সেগুলোর আর কোনো কর প্রদান করেননি। এ কারণে ওই গাড়িগুলো বাংলাদেশে চলাচলের যোগ্যতা হারিয়েছে। এ কারণেই অভিযান চালিয়ে তারা গাড়িগুলো উদ্ধার করেন। মহাপরিচালক ড. ময়নুল খান প্রেস ব্রিফিংয়ে জানিয়েছেন, ২২শে সেপ্টেম্বর মৌলভীবাজারের শাহ মোস্তফা মোটরসে অভিযান চালান সিলেটের শুল্ক গোয়েন্দারা। এ সময় তারা ওয়ার্কশপ থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় ‘মিতসুবিশি’ ব্র্যান্ডের ২৯৭২ সিসির কালো রংয়ের একটি জিপ গাড়ি আটক করে। গাড়িটির রেজিস্ট্রেশন নম্বর ঢাকা মেট্রো ঘ-১১-৬৩৩৯। গাড়িটি আটককালে গাড়ির মালিককে পাওয়া যায়নি। তদন্তে বিআরটিএ’র তথ্য যাচাই করে শুল্ক গোয়েন্দারা দেখেন যে, ভুয়া কাগজপত্র দাখিল করে বিআরটিএ থেকে রেজিস্ট্রেশন নেয়া হয়েছে। পরবর্তীতে কাস্টম হাউজ চট্টগ্রাম হতে কারনেট তালিকায় নিয়ে আসা গাড়ির চেসিস নম্বর ও ইঞ্জিন নম্বরের সঙ্গে এই গাড়ির চেসিস নম্বর ও ইঞ্জিন নম্বর মিলে যায়।  গাড়িটি কারনেট সুবিধার আওতায় শুল্ক কর ফাঁকি দিয়ে বিদেশ থেকে আনা হয়েছে। এই গাড়িটি সিলেট ও মৌলভীবাজারে দীর্ঘদিন ধরে চলাচল করছে। কয়েকজন প্রবাসীই পর্যাক্রমে গাড়িটি ব্যবহার করেন। এদিকে, গাড়িটির সন্ধান পাওয়ার পর শুল্ক গোয়েন্দা অভিযান শুরু করলে কিছুদিন গাড়িটি গোপন স্থানে রাখা হয়। অভিযানের মুখেই গাড়িটি একপর্যায়ে মালিকপক্ষ ওই মোটর্সে রেখে দেয়। এর আগে গোয়েন্দারা মৌলভীবাজারের শাহবন্দর এলাকার পতনবাজারে আরেকটি অভিযান চালান। ওই অভিযানে তারা পতন গ্রাম থেকে ‘নিশান ৩০০-জেড এক্স’ ব্র্যান্ডের মেরুন রংয়ের একটি বিলাসবহুল বিদেশি গাড়ি আটক করেন। পতন গ্রামের যাকাত উল্লাহর ছেলে সাজ্জাদুর রহমানের বাড়ি থেকে তারা গাড়িটি আটক করলেও মালিককে পাননি। তবে, গোয়েন্দা তথ্য নিয়ে জানতে পারেন, গাড়ির প্রকৃত মালিক রুবেল আহমেদ। আর সাজ্জাদুর রহমান হচ্ছেন রুবেলের মামা। গাড়িটির প্রামাণিক দলিলাদি চাওয়া হলে সাজ্জাদুর রহমান তা উপস্থাপন করতে পারেননি। এদিকে, চলতি মাসের ২ তারিখ সিলেট নগরীর সুবিদবাজারের ১২৮ লন্ডনি রোডের বাসায় অভিযান চালায় শুল্ক গোয়েন্দাদের একটি টিম। এ সময় ওই বাড়ি থেকে তারা বিলাসবহুল ‘জাগুয়ার এস টাইপ’ ব্র্যান্ডের কালো রংয়ের গাড়ি আটক করেন। অভিযানকালে সিলেট মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি টিমও উপস্থিত ছিল। গাড়িটির বৈধতা বিষয়ে ওই বাড়ির মালিক আশফাকুর রহমান কোনো সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেননি। মইনুল খান জানিয়েছেন, মিথ্যা ঘোষণায় আনা ও কারনেট সুবিধার অপব্যবহারের মাধ্যমে দেশে নিয়ে আসা গাড়ি উদ্ধারে অভিযান শুরু হয়েছে। এই অভিযানের অংশ হিসেবে সিলেট ও মৌলভীবাজার থেকে তিনটি গাড়ি আটক করা হয়। এ নিয়ে সিলেটে ৭টি বিলাসবহুল গাড়ি উদ্ধার করা হলো। এরকম আরো অন্তত ৩০টি গাড়ি আটকের জন্য অভিযান চলছে বলে জানিয়েছেন সিলেটের শুল্ক গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।

Share Now
December 2024
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031