মিয়ামনারের ব্যবসায়ীরা ১০০ বছরের ব্যবসায়িক সম্পর্ক ফিরিয়ে আনতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন । সোমবার (২৬ সেপ্টেম্বর) কক্সবাজারে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ-মিয়ানমারের দ্বিপাক্ষিক ব্যবসায়িক সংলাপে মিয়ানমারের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল তাদের আগ্রহের কথা জানান। শহরের হোটেল ওশান প্যারাডাইসের সম্মেলন কক্ষে সকাল ১০ টা থেকে বেলা দুইটা পর্যন্ত এ সভা চলে।
চট্টগ্রামের ব্যবসায়িক সম্পর্কের পুরনো কথা টেনে এনে মিয়ানমারের ব্যবসায়ীরা বলেন, বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। শুধু একটি নদি বাংলাদেশ-মিয়ামনার দূরত্ব বাড়িয়েছে। রাখাইন রাজ্য থেকে চট্টগ্রামকে প্রায় ১০০ বছর শাসন করা হয়। এ সময় দুই দেশের ব্যবসায়িক সম্পর্ক খুব গভীর ছিল। পরে ভৌগলিক কারণে তারা পৃথক হলেও সেই পুরনো সম্পর্ক তারা ফিরিয়ে আনতে তারা আগ্রহী।
তাদের মতে, অর্থনৈতিক কারণে মিয়ানমার পিছিয়ে গেছে। বাংলাদেশের সাথে তারা অর্থনৈতিক বন্ধুন আরো সুদৃঢ় করতে চায়। দেশে গণতান্ত্রিক যে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে তা ব্যবহার করতে না পারলে দুই দেশই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ জন্য দ্রুত ব্যবসায়িক সম্পর্ক উন্নয়ন করতে ইভয় দেশের ব্যবসায়ীরা আগ্রহের কথা জানান।
মিয়ানমারের ব্যবসায়ীরা জানায়, ইয়াঙ্গুন তাদের থেকে অনেক দূরে। এ কারণে রাখাইন রাজ্যের ব্যবসায়ীরা লাভবান হতে পারেনা। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ তাদের খুব কাছে। বিষয়টি বিচেনায় দুই দেশের ব্যবসায়ীক পর্যায়ে সম্পর্ক তৈরী হলে ইভয় পক্ষই লাভবান হবে। মাছ, লবণ, কাঠ, পাথর ইত্যাদি আমদানী রপ্তানী করে দুই দেশই উপকৃত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে দ্বি-পাক্ষিক আলোচনায় ওঠে আসে। এ সময় বাংলাদেশের সীমান্তের ব্যবসায়ীরা মিয়ানমারে অতিরিক্ত টেক্সের কথা তুলে ধরেন।
সভার প্রধান অতিথি জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন কী-পয়েন্ট হিসাবে আমদানি-রপ্তানী ঘাটতি কমাতে জয়েন্ট শিপিং কমিটি গঠন, বাণিজ্য দ্রæত ও সহজ করতে এলসি সম্প্রসার, বাংলাদেশী ফিশারী বিশেষজ্ঞদের মিয়ানমারে কাজ করার সুযোগ প্রদান, জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রæপের সভা, সীমান্ত জেটি সংস্কার, বর্ডার এলাকার রাস্তা সংস্কার, ব্যবসায়ীক ভিসা পাসসহ আরো কয়েকটি বিষয় উপস্থাপন করেন।
তিনি বলেন, জাতীয় অর্থনীতির সমৃদ্ধির লক্ষে সরকার দেশব্যাপী ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল ঘোষণা করেছে। তার মধ্যে কক্সবাজার-চট্টগ্রামে রয়েছে ডজনাধিক জোন। এসব জোনে মিয়ানমারের ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগের আহবান জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। এ ছাড়া আমদানি-রপ্তানী বৃদ্ধি ও দু’দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের মানোন্নয়নে যৌথ ভাবে নির্দিষ্ট সময়ে উভয় দেশে বাণিজ্য মেলা করার প্রতিও দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়।
জেলা প্রশাসক বাংলাদেশী ঔষধ, সিমেন্ট, দুধ, রড,ইলেক্ট্রনিক্স পন্য মিয়ানমারে আমদানি করতে সেদেশের ব্যবসায়ীদের আহবান জানান। এসবের মাধ্যমে পারলে উভয় দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বৃদ্ধি পাবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সভায় বাংলাদেশ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সহকারি বাণিজ্য বিশেষজ্ঞ আবু সালেহ মুহাম্মদ ইমরান, কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি এড. সিরাজুল মোস্তফা, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) কাজী মোহাম্মদ আব্দুর রহমান বিশেষ অতিথি ছিলেন। এছাড়া উভয় দেশের চেম্বার অফ কর্মাস এন্ড ইন্ডাষ্ট্রীর ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে বাংলাদেশ-মিয়ানমারের দ্বিপাক্ষিক ব্যবসায়িক সংলাপ শেষে মিয়ানমান রাখাইন রাজ্যের ও কক্সবাজারের ব্যবসায়ীদের মাঝে নির্দিষ্ট ৮ টি দফা নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানান বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেয়া কক্সবাজার চেম্বার অফ কর্মাস এন্ড ইন্ডাষ্ট্রীর সহ-সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা।
তিনি জানিয়েছেন, সভায় প্রতি মাসে টেকনাফের সুবিধাজনক স্থান ও মিয়ানমারের মংডু শহরের সীমান্ত বাজার বসানো, সীমান্ত বন্দর সম্প্রসারণ, ব্যবসার উন্নয়নে নানা বিষয়ের পাশাপাশি পর্যটনের বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। এসব আলোচনা মিয়ানমারের প্রতিনিধিরা তাদের সরকারকে এবং বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশ সরকারকে অবহিত করবে। আগামী নভেম্বর মাসে মিয়ানমারের এ বিষয়ে অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা হবে বলেও জানান তিনি।
এতে মিয়ানমারের ৮ প্রতিনিধির ব্যবসায়ীদের পক্ষে নেতৃত্ব দেন রাখাইন এ্যাস্টেট চেম্বার অফ কর্মাস এন্ড ইন্ডাষ্ট্রীর চেয়ারম্যান টিন অং। তিনি বলেন, মিয়ানমারের প্রতি আন্তর্জাতিক আগ্রহ আগের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে। এসুযোগকে এখন কাজে লাগাতে না পারলে বাংলাদেশ-মিয়ানমার দুদেশই বাণিজ্যিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। রাখাইন রাজ্যের সাথে চট্টগ্রাম অঞ্চলের সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। অর্থনৈতিক উন্নতির মাধ্যমে এ সম্পর্ককে আরো জোরদার হবে। অনুষ্ঠান সঞ্চালক হিসেবে বিভিন্ন পয়েন্ট এর উপর পরামর্শ ও নীতি নির্ধারনী বক্তব্য রাখেন মিয়ানমারের সিটুয়েস্থ বাংলাদেশ কনসুল্যেট কার্যালয়ের কাউন্সিল ও হেড অফ মিশন শাহ আলম খোকন। সভা শেষে মিয়ানমারের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা রামু পরিদর্শনে যান। এছাড়া মঙ্গলবার চট্টগ্রামে গিয়ে ব্যবসায়ীদের সাথে তাদের বৈঠক করারও কথা রয়েছে।