চিকিৎসক পৃথিবীতে আসার পর পরই মৃত ঘোষণা করেছেন। বাবা মা আর স্বজনদের কান্না বাঁধা মানছে না। কিন্তু তাকে যে বিদায় দিতেই হবে। খোড়া হলো কবর, সমাহিত হবে সেখানেই। হঠাৎ কেঁদে উঠলো শিশুটি। বিষাদের মধ্যে হঠাৎ আনন্দের ঝলকানি। আনন্দে উদ্বেল হয়ে উঠলো সবাই। কেউ কেউ কাঁদল আরও একবার। তবে এই কান্না আনন্দের, এই কান্না জীবনের।

ফরিদপুর শহরের কমলাপুর এলাকায় এই অভাবনীয় ঘটনাটি ঘটে। শিশুটির বেঁচে থাকার পরও তাকে মৃত ঘোষণার খবরে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তার স্বজনরা। ক্ষুব্ধ হয়েছেন চিকিৎসা প্রশাসনের কর্মকর্তারাও। ঘটনাটি খতিয়ে দেখে দায়ী চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছে তার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

ক্রিকেটার নাজমুল হুদা মিঠু ও আইনজীবী নাজনীন আক্তার দম্পতির প্রথম সন্তান জন্ম নিয়েছিল স্থানীয় ক্লিনিক ডা. জাহেদ মেমোরিয়াল হাসপাতালে। জন্ম নেয়ার পর সেখানকার এক চিকিৎসক জানান, কন্যা শিশুটি মৃত। এরপর তাকে সমাহিত করতে কবরস্থানের নিয়ে যান স্বজনরা। কিন্তু রাতে দাফন করবেন না বলে সকালে আসতে বলেন মাওলানা। আর সকালে দাফন করার আগ মুহূর্তেই শিশুটি কেঁদে উঠে, নড়াচড়া করে নিজের অস্তিত্বের জানান দেয়। নবজাতকটি বর্তমানে ডা. জাহেদ মেমোরিয়াল শিশু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

স্বজনরা জানান, বুধবার দিবাগত রাত সাড়ে বারোটার দিকে শহরের কমলাপুর এলাকা থেকে প্রসূতি নাজনীন আক্তার পপিকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন শ্বশুর আবুল কালাম মিয়া। এ সময় ওই হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে অন্য এক প্রসূতির অপারেশন করছিলেন চিকিৎসক রিজিয়া আলম।

আবুল কালাম মিয়া বলেন, ‘আমার পুত্রবধূর অবস্থা খারাপ হওয়ায় আমরা বারবার চিকিৎসককে দেখতে অনুরোধ করলে চিকিৎসক রিজিয়া আলম তাকে অন্য কোথাও নিয়ে যেতে বলেন। এরপরও অনুরোধের মুখে তিনি আমার পুত্রবধূর কাছে যান। এর মধ্যেই জন্ম নেয় একটি কন্যা সন্তান। এর দুই ঘণ্টা পরই চিকিৎসক রিজিয়া আলম তাকে মৃত ঘোষণা করেন।’

শিশুটির দাদা বলেন, ‘রাত তিনটার দিকে নবজাতককে শহরের অলীপুর কবরস্থানে দাফন করার জন্য নিয়ে গেলে মাওলানা আব্দুর রব জানান, সকালে দাফন হবে। পরে শিশুটিকে কার্টনে মোড়ানো অবস্থায় একটি কবরের পাশে রেখে চলে আসি আমরা। সকালে আমরা আবার কবরস্থানে গেলে আমার নানু ভাই কেঁদে উঠে।’

আলীপুর কবরস্থানের মাওলানা আব্দুর রব বলেন, ‘রাতে তারা বাচ্চাটাকে কবর দিতে নিয়ে আসলে, আমি সকালে আনতে বলি, কিন্তু তারা রাতেই একটি কবরের পাশে শিশুটিকে রেখে চলে যায় তারা। সকালে শিশুটিকে কবর দিতে মাথা কোন দিকে তা নিশ্চিত করতে কার্টন খুলতেই শিশুটি কান্না করে নড়েচড়ে ওঠে। ’

এরপর স্বজনদের খবর দেন আবদুর রব। তারা আবার শিশুটিকে হাসপাতালে নিয়ে যান। নাতনির বেঁচে ওঠায় যারপরনাই খুশি দাদী মনোয়ারা বেগম ভীষণ ক্ষুব্ধ চিকিৎসকের ওপর।। তিনি বলেন, ‘সে বেঁচে উঠে ডাক্তারকে জবাব দিয়েছে, বলেছে আমাকে এভাবে মেরে ফেলো না, আমি বাঁচতে চাই’।

মনোয়ারা বেগম বলেন, ‘সেবা নামে এ কেমন আচরণ, একটি জীবিত শিশুকে মৃত বলে কবরে পাঠিয়ে সারারাত ফেলে রাখা হলো। এর বিচার হওয়া উচিত।’

শিশুটির বাবা ফরিদপুর জেলা ক্রিকেট দলের সদস্য নাজমুল হুদা মিঠু ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘এই হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগের চিকিৎসক ও তাদের সহযোগীরা দায়িত্বে অবহেলা করেছেন। আমার মতো আর কোনো পিতার যেন এমন ভাগ্য না হয়।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চিকিৎসক রিজিয়া আলম ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘হাসপাতালে আসন সংকট থাকায় প্রথমে ভর্তি করতে চাইনি। পরে যখন দেখতে যাই তখন স্বাভাবিকভাবে বাচ্চা প্রসব হয়। কিন্তু দীর্ঘক্ষণেও বাচ্চার পালস ও রেসপন্স না পাওয়ায় মৃত বিবেচনায় বাচ্চাটিকে স্বজনদের কাছে দিয়ে দেয়া হয়।’

হাসপাতালের পরিচালনা কমিটির সদস্য শওকত আলী জাহিদ বলেন, ‘এটি একটি অলৌকিক ঘটনা। ’

হাসপাতালের পরিচালনা কমিটির যুগ্ম সম্পাদক সালাউদ্দিন ফরিদ বলেন, ‘বিষয়টি আমরা তদন্ত করে দেখবো। কোন স্টাফের কর্তব্যে অবহেলার প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

জনাব ফরিদ বলেন, ‘জন্ম নেওয়া শিশুটি অপুষ্ট ছিলো, মাতৃগর্ভে ছয় মাসের কম সময় থাকার পরই ভূমিষ্ঠ হয় সে।’

ফরিদপুর সিভিল সার্জন অরুণ কান্তি বিশ্বাস এ বিষয়ে বলেন, ‘বিষয়টি খুবই দুঃজনক। কোনো রোগী চিকিৎসকের কাছে এলে তাকে সেবা দিতে হবে। শিশুটি কেন সেবা পায়নি সেটি খতিয়ে দেখা হবে।’

Share Now
December 2024
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031