নোবেল বিজয়ী প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস জাতিসংঘের মহাসচিব কর্তৃক নিযুক্ত উক্ত কমিশনের একজন সদস্য ছিলেন।স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির লক্ষ্যে গঠিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উচ্চ পদস্থ কমিশনের সহকারী চেয়ারম্যান ফান্সের প্রেসিডেন্ট ওলাঁদ ও সাউথ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট জুমা কমিশনটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুনের দফতরে গত ২০ সেপ্টেম্বর পেশ করেন। চলতি বছরের ২ মার্চ জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন বৈষম্য দূরীকরণ, অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য স্বাস্থ্য এবং সামাজিক ক্ষেত্রে কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে উক্ত কমিশন গঠনের ঘোষণা দেন। পেশকৃত প্রতিবেদনটি নীতির ভারসাম্য এবং কারিগরী ও ভৌগোলিক অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধকরণের লক্ষ্যে প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ডিরেক্টর জেনারেল ডঃ মার্গারেট চ্যান কর্তৃক আমন্ত্রিত কমিশনারগণের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। অন্যান্য কমিশনারদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ প্রফেসর জোসেফ স্টিগলিজ, ডঃ জুডিথ শামিয়ান এবং আফ্রিকান ইউনিয়ন কমিশনের চেয়ারপারসন ডঃ নিকোসাজানা লামিনি–জুমা। গত মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের পাশাপাশি আয়োজিত আরো একটি অনুষ্ঠানে জাতিসংঘের মহাসচিবকে উক্ত প্রতিবেদনটি আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রদান করা হয়। এছাড়া আগের দিন লানসেট সম্পাদক ডঃ রিচার্ড হরটনের সঞ্চালনায় জাতিসংঘের সদর দফতরে প্রতিবেদনটি অনুমোদনের লক্ষ্যে সকল কমিশনাররা একটি বৈঠকে মিলিত হন। স্বাস্থ্য খাতে নিয়োজিত জনশক্তি উন্নয়নের ব্যাপক প্রয়োজনীয়তা রাষ্ট্রসমূহের প্রধানদের উপলব্ধি করানোর লক্ষ্যে প্রতিবেদনটিতে জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য মাত্রা ২০৩০ অর্জনে ভুমিকা রাখে এরকম ১০টি সুপারিশ পেশ করা হয়েছে। রিপোর্টে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে– চাকুরী সৃষ্টি, নারী অধিকার, শিক্ষার প্রশিক্ষণ এবং দক্ষতা, স্বাস্থ্য সেবা প্রদান ও প্রতিষ্ঠান, সাশ্রয়ী তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার, সংকট ও মানবিক উন্নয়ন কাঠামো, অর্থায়ন এবং আর্থিক সুযোগ, অংশীদারিত্ব ও সমন্বয়, আন্তর্জাতিক অভিভাসন, উপাত্ত, তথ্য এবং জবাবদিহিতা। প্রতিবেদনটির বিশেষ অংশে সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে প্রচলিত স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত পৃথিবীর চরম দরিদ্র মানুষগুলোকে কীভাবে স্বাস্থ্য সেবার আওতায় নিয়ে আসা যায় এ প্রসঙ্গে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ডাইরেক্টর জেনারেল মুহাম্মদ ইউনূসের পরামর্শ চান। চূড়ান্ত প্রতিবেদনটিতে তার পরামর্শ অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
প্রফেসর ইউনূস বলেন, স্বাস্থ্য সেবা সমস্যার সমাধানের লক্ষ্যে এটিকে হতে হবে আরো বেশি টেকসই এবং প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহারের মাধ্যমে একে আনতে হবে বিশ্বের প্রতিটি মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে। এছাড়া গুরুত্ব দিতে হবে সামাজিক ব্যবসা উদ্যোগের ব্যাপক প্রসার এবং সকল প্রকার অস্বাস্থ্যকর খাবার ও পানীয় সমূহ বর্জনের উপর। এদিকে যথাযথ বৈশ্বিক কাঠামো তৈরিতে সাহায্য ও সুপারিশগুলো যাতে জাতীয় সরকারের কর্ম পরিকল্পনার অন্তর্ভুক্ত করা হয় এবং এগুলোর জন্য আলাদাভাবে পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা প্রণয়ন নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে প্রতিবেদনটিতে জাতিসংঘের মহাসচিব বরাবর সুপারিশ করা হয়।