কিশোর বয়সে বিভিন্ন দূরপাল্লার বাসে লাইনম্যান, সুপারভাইজার হিসেবে কাজ শুরু  করেছিলেন পরিবহন সেক্টরে।কুমিল্লার শাসনগাছা এলাকার মো. আবদুল অদুদ খান (৫৮)।  এরপর প্রায় ৪০ বছর ধরে চালক হিসেবে কাজ করছেন দূরপাল্লার বিভিন্ন পরিবহনে। এরমধ্যে ঢাকা টু কুমিল্লা রুটেই কেটে গেছে প্রায় ৩০ বছর। বর্তমানে সায়েদাবাদ থেকে এই রুটের ‘তিশা এক্সক্লুসিভ’ ঢাকা মেট্রো-ব-১৪-৩১০৬ নম্বর বাস চালান তিনি। তার দাবি অনুযায়ী দীর্ঘ সময়ের গাড়ি চালনায় নিজে যেমন কোনো দুর্ঘটনার শিকার হননি তেমনি তার কোনো ভুল কিংবা অবহেলায় কোনো সাধারণ মানুষেরও মৃত্যু হয়নি। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে সড়কে কয়েক হাজার মানুষের মৃত্যু ও আহত হয়ে পঙ্গুত্ববরণ এবং গেল ঈদুল আজহার আগে-পরে কয়েকদিনে অব্যাহত সড়ক দুর্ঘটনায় মানুষের মৃত্যু এবং আহত হওয়ার ঘটনায় তিনিও মর্মাহত। এ জন্য অদক্ষ চালকদেরই দায়ী করছেন আবদুল অদুদ। তিনি জানান, যে হারে দুর্ঘটনা ঘটছে তা অদক্ষ চালকদের কারণেই ঘটছে। বিপজ্জনক ওভার টেকিং, গাড়ি চলা অবস্থায় মোবাইল ফোন কানে ধরে চালকদের কথা বলা, মহাসড়কগুলোতে সিএনজি, লেগুনাসহ অবাধে ছোট যান চলাচল ছাড়াও চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স দেয়ার ক্ষেত্রে নিয়মনীতি না থাকার কারণে অহরহ দুর্ঘটনা ঘটছে বলে মন্তব্য তার। আবদুল অদুদ বলেন, যে গাড়িতে যাত্রীরা থাকে তাদের সবার প্রাণ থাকে চালকের হাতে। চালক একটু সচেতন হলেই দুর্ঘটনা এড়ানো যায়। কিন্তু অদক্ষ চালকেরা এ বিষয়টি একেবারেই বুঝতে চান না। তিনি জানান, গেল ঈদে বেশির ভাগ দুর্ঘটনাই ঘটেছে চালকদের কারণে। একটি বাড়তি ট্রিপের জন্য অনেক চালকই নির্ধারিত গতি সীমার বাইরে গাড়ি চালিয়েছেন। আর গাড়িও ছিল যাত্রীতে ঠাসা। ফলে, বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানোর কারণে দুর্ঘটনা বেড়ে নিহত ও আহতদের সংখ্যা বেড়েছে। আবদুল ওদুদ বলেন, পরিবহনে যারা ওঠেন তারা আমাদেরই লোক। গাড়িতে ওঠার পর তাদের দেখভালের দায়িত্ব আমাদের। কিন্তু আমাদের একটু ভুলের কারণে আমরা তাদের সেই নিরাপত্তা দিতে পারছি না। আবদুল ওদুদের মতে, মহাসড়কগুলোতে ওভারটেকিং বন্ধ করতে হবে। সড়কে ছোট যান চলাচল সীমিত করতে হবে। এখন ঘরে বসে কিছু টাকার বিনিময়ে যোগ্যতা না থাকলেও ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়া যায়। তাই, লাইসেন্স দেয়ার ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের আরো দায়িত্বশীল, সচেতন ও দুর্নীতিমুক্ত হতে হবে। তবেই দক্ষ চালক তৈরি হবে। দুর্ঘটনাও নিয়ন্ত্রণে আসবে।
‘তিশা প্লাস’ ঢাকা-কুমিল্লা-বিশ্বরোড, ঢাকা মেট্রো-ব-১৫-০২৭৯ নম্বর বাসের চালক মো. শফিকুল ইসলাম (৪৫)। প্রায় তিন দশক ধরে পরিবহন লাইনে কাজ করছেন। চালক হিসেবে গাড়ি চালাচ্ছেন আড়াই দশকের বেশি সময় ধরে। আলাপকালে তিনি জানান, মহাসড়কগুলোতে যে হারে দুর্ঘটনা ঘটছে তাতে চালকদের দায়িত্বহীনতা ও সচেতনতার কারণেই দুর্ঘটনা ঘটছে। কার আগে, কে যাবে সড়কগুলোতে সেই প্রতিযোগিতা। মহাসড়কগুলোতে ১০০ মাইলের বেশি গতিতে চালকরা গাড়ি চালাচ্ছেন। এতে প্রতিনিয়ত মারা যাচ্ছে সাধারণ মানুষ। আহত হয়ে পঙ্গুত্ববরণ করছেন অনেকে। তিনি বলেন, আমাদের নিজেদেরও খারাপ লাগে। তবে, আমরা তো ইচ্ছে করে দুর্ঘটনা ঘটাই না। অনেক সময় নির্ঘুম থেকে গাড়ি চালাতে হয়। কখনও শারীরিকভাবে অনুপযুক্ত অবস্থায় অসুখ নিয়েও এ কাজ করতে হয়। আবার কিছুক্ষেত্রে দ্রুত গাড়ি চালাতে যাত্রীদেরও চাপ থাকে। ফলে, দুর্ঘটনা বেড়ে যায়। মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, দুর্ঘটনাজনিত আইন দুর্বল নয়। কিন্তু আমরা যদি আইন না মানি তাহলে সে আইন দিয়ে তো কোনো লাভ হবে না। এ আইন সম্পর্কে অনেক চালকেরই কোনো ধারণা নেই। এ বিষয়ে তাদের বোঝানো দরকার। এছাড়া যেসব চালক আইন লঙ্ঘন করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেয়া দরকার। তিনি বলেন, অল্প বয়েসী চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স দেয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক হতে হবে। চালকদের সাপ্তাহিক ছুটি ও তাদের মানসিক প্রশান্তির ব্যবস্থা করতে হবে। তাহলে দুর্ঘটনা কিছুটা রোধ করা যাবে।
রাজধানীর টিকাটুলি ট্রাক স্ট্যান্ডে কথা হয় ট্রাকচালক মো. হাসান (৩৫)-এর সঙ্গে। শরীয়তপুরের সখীপুরের গাজীপুরা এলাকার বাসিন্দা হাসানের মতে, সড়ক ও মহাসড়কে কোনো পরিবহনের চালকই আইন মানেন না। যার যার নিজস্বগতিতে যেভাবে খুশি গাড়ি চালাচ্ছেন। তবে, ইদানীং মহাসড়কগুলোতে লেগুনা, সিএনজি, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার কারণে দুর্ঘটনা বাড়ছে বলে মনে করেন তিনি। হাসান জানান, অদক্ষ চালকরাই সড়কগুলোতে গাড়ি চালাচ্ছেন বেশি। তাদের ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতেও কোনো সমস্যা হয় না। যদি নিয়ম মতো লাইসেন্স তারা না পান তাহলে ‘অন্যভাবে’ ঠিকই লাইসেন্স পেয়ে যাচ্ছেন তারা। এ কারণে তাদের দক্ষতা পরীক্ষারও সুযোগ নেই। তাই অবাধে লাইসেন্স দেয়া বন্ধে কর্তৃপক্ষকে আরো সচেতন ও দায়িত্বশীল হতে হবে। তিনি বলেন, কেউ  ইচ্ছা করে দুর্ঘটনা ঘটায় না। কিন্তু ড্রাইভাররা যদি একটু খেয়ালি হন তাইলে দুর্ঘটনা কমবে।

Share Now
December 2024
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031