প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারীদের জন্য টেকসই ভবিষ্যত নির্মাণের লক্ষ্যে সুযোগ সম্প্রসারণ এবং কর্মক্ষেত্রকে প্রসারিত রাখতে বিশ্ব নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
শেখ হাসিনা তার দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ‘যে সমাজ নারীর অংশগ্রহণ এবং ক্ষমতায়নের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়, সে সমাজে উগ্র চরমপন্থার কোনো স্থান নেই… আমাদের নারীর কর্মক্ষেত্রকে প্রসারিত করার মাধ্যমে সকলের জন্য টেকসই ভবিষ্যত বিনির্মাণে কাজ করে যেতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার বিশ্বাস যে সমাজ নারীর অংশগ্রহণ ও ক্ষমতায়নের ক্ষেত্র সৃষ্টি করে সেখানে সহিংস চরমপন্থার কোনো জায়গা নেই। আমরা অবশ্যই টেকসই ভবিষৎ নির্মাণের জন্য ক্ষেত্র আরো প্রসারিত করা অব্যাহত রাখবো।
মঙ্গলবার জাতিসংঘ সদর দপ্তরের কনফারেন্স রুমে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭১ তম অধিবেশনে ‘ওমেনস লিডারশিপ অ্যান্ড জেন্ডার পার্সপেক্টিভ অন প্রিভেন্টিং অ্যান্ড কাউন্টারিং ভায়োলেন্স এক্সট্রিমিজম’ বিষয়ক সাইড ইভেন্টে ভাষণকালে তিনি এ সব কথা বলেন।
নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী এরনা সোলবার্গ’এর আমন্ত্রণে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
সন্ত্রাসবাদ ও সহিংস চরমপন্থাকে সভ্য সমাজকে লাঞ্ছিত করছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তারা শান্তি ও নিরাপত্তা, টেকসই উন্নয়ন এবং মানুষের প্রতি মর্যাদাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। ‘আমরা অবশ্যই আমাদের অবস্থান থেকে এই চ্যালেঞ্জ মোকবেলা করবো। আমরা সে সমাধানই চাই, নারীরা তাতে অবশ্যই অংশ নেবে।’
তিনি বলেন, ‘এই সমস্যা সমাধানে আমাদের একযোগে কাজ করতে হবে। আমরা যে সমাধানের পথেই যাই না কেন, নারীদের সেখানে অংশীদারিত্ব থাকতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী এসময় উগ্র চরমপন্থা প্রতিরোধে নারীদের অংশগ্রহণ এবং নারী নেতৃত্বের অন্তর্ভূক্তির নতুন পরিকল্পনার জন্য সন্তোষ প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, ‘আমি সবার জন্য শিক্ষানীতিতে বিশ্বাসী, বিশেষ করে নারীদের জন্য এবং এটাই সমাজ থেকে সন্ত্রাস এবং উগ্র চরমপন্থা হটানোর ক্ষেত্রে গুরুতপূর্ণ হাতিয়ার’।
তিনি বলেন, আমি আমাদের মায়েদের এক একজনকে তাদের সন্তানদের জন্য রোল মডেল হিসেবে নিজেকে উপস্থাপনের জন্য উৎসাহিত করে থাকি। দেশের প্রাইমারী স্কুলগুলোর শিক্ষকদের শতকরা ৬০ শতাংশ নারী শিক্ষক এবং যারা এই সমাজে বিশেষ করে শিশুতোষ সমাজে মূল্যবোধ এবং সংযমের আলো ছড়াচ্ছে।
শিশুদেরকে অবশ্যই এসব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড এবং উগ্র চরমপন্থার পথ থেকে দূরে রাখতে হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
আমাদের দেশের পুলিশসহ আইন-শৃংখলা রক্ষাকারি বাহিনীর নারী সদস্য এবং স্থানীয় সরকারের নারী জন প্রতিনিধিরা বিভিন্ন পরিবার পর্যায়ে সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যমে সমাজ থেকে উগ্র চরমপন্থার মত অসামঞ্জস্য দূরীকরণে গণসচেতনতা সৃষ্টিতে বিশেষ ভূমিকা রাখছে বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
এক্ষেত্রে নারীদের অধিকার আদায়ে জাতীয় সংসদের নারী সদস্যদের ভূমিকা কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি এটা দেখে খুশী যে, সহিংস চরমপন্থা রোধে জাতিসংঘ মহাসচিব নারীর ভূমিকা ও নেতৃত্ব উপলব্ধি করে নতুন কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন।
উগ্র সন্ত্রাসবাদে নারীদেরকেও সম্পৃক্ত করার জন্য নতুন এক ধরনের অপচেষ্টা শুরু হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী এ সময় সন্ত্রাস ও উগ্র চরমপন্থার বিরুদ্ধে তার সরকারের জিরো টলারেন্স নীতির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, কি কারণে এসব নারীরা ভুল পথে প্রলুদ্ধ হচ্ছে তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি গোঁড়ামী প্রবণতা ও সহিংস চরমপন্থারোধে সবার জন্য শিক্ষা বিশেষ করে মেয়েদের জন্য শিক্ষা একটি শক্তিশালী হাতিয়ার। আমি আমাদের মেয়েদের তাদের সন্তানদের সামনে আদর্শ মডেল ও পরম বন্ধু হিসেবে ভূমিকা পালনে অনুপ্রাণিত করছি।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতির প্রসংগসহ তার সরকারের গৃহিত বিভিন্ন নারীর উন্নয়নমূলক পদক্ষেপের তথ্য তুলে ধরে বলেন, ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদ ইস্যু থেকে সবসময়ই নারীদেরকে একটু সরিয়ে রাখার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়।
তিনি বলেন, আমাদের কাছে সন্ত্রাসীর একটাই পরিচয়, সে সন্ত্রাসী। সন্ত্রাসীর কোন জাতি, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র নেই।
এছাড়াও প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে ’গ্লোবাল কমিউনিটি অ্যাংগেজমেন্ট এন্ড রেজিলিয়েন্স ফান্ড’র (জিসিইআরএফ) সঙ্গে মিলে তার সরকারের নারীর ক্ষময়তায়নের লক্ষ্যে পদক্ষেপ গ্রহণের কথাও উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী নারী সদস্যরা সহিংস চরমপন্থা প্রতিরোধে নীতি প্রণয়নে সোচ্চার ভূমিকা পালন করছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সহিংস চরমপন্থীদের মধ্যে নারীসদস্য নিযুক্ত করার নতুন প্রবণতা দেখছি। আমরা বোঝাবার চেষ্টা করছি এ ধরনের ভুল পথে যোগ দিতে তারা কেনো উদ্বুদ্ধ হলো।
তিনি বলেন, জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি নারীদের জন্য সমান সুযোগ ও অধিকার নিশ্চিত করেছে এবং নারীর ক্ষমতায়ন ধর্মীয় এজেন্ট পেছনে ফেলে দিয়েছে। সন্ত্রাসী আমাদের কাছে একজন সন্ত্রাসী হিসেইে বিবেচিত এবং তাদের কোনো ধর্ম নেই।
শেখ হাসিনা বলেন, সংঘাত নিরসনে এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় সোচ্চার হতে সরকার তৃণমূল পর্যায়ে নারীদের দক্ষতা উন্নয়নে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকার গ্লোবাল কমিউনিটি এনগেজমেন্ট অ্যান্ড রেজিলেন্স ফান্ডের (জিসিআরআইএফ) সঙ্গে প্রকল্প গ্রহণ করেছে। সেখানে নারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নে অংশ নিতে পারবেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া ডেস্কে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজিব ওয়াজেদ জয়, এলজিআরডি ও সমবায় মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন, প্রবাসীকল্যাণ এবং বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি, জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমস্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রাণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ডা. দিপু মনি।
সূত্র: বাসস