আদালত বাংলাদেশের চুরি যাওয়া রিজার্ভের ১৫.২৫ মিলিয়ন ডলার ( প্রায় ১২০ কোটি টাকা) অবিলম্বে বাংলাদেশ ব্যাংককে ফেরত দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে ফিলিপাইনের । দীর্ঘ প্রক্রিয়ার পর আজ সোমাবার ফিলিপাইনের একটি আদালত এই রায় দিলো।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী মুখপাত্র এফ এম মোকাম্মেল হক বিকালে এক ব্রিফিংয়ে জানান, এই অর্থ ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা আছে। কোন প্রক্রিয়ায় এই অর্থ বাংলাদেশে আসবে, সেটা দুই দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বসে সিদ্ধান্ত নেবে।
এক প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী মুখপাত্র জানান, বাকি ৫২০ কোটি টাকাও দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে আশাবাদী বাংলাদেশ ব্যাংক। তিনি বলেন,‘বাকি টাকা আনতে আইনি প্রক্রিয়া অব্যাহত আছে। ফিলিপাইন সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ ব্যাপারে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করছে, আশা করছি সব টাকাই বাংলাদেশ ব্যাংক উদ্ধার করতে পারবে।’
আন্তর্জাতিক একটি হ্যাকার চক্র গত ফেব্রুয়ারি মাসে নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে গচ্ছিত বাংলাদেশ ব্যংকের ১০ কোটি ডলার ফিলিপাইন ও শ্রীলংকায় পাচার করে। এই ঘটনাটি জানাজানি হয় মার্চে। এর মধ্যে ফিলিপাইনে পাচার হয় আট কোটি ডলার। এই ঘটনায় অভিযুক্তদের একজন ব্যবসায়ী কিম অং ফিলিপাইন সরকারের কাছে দেড় কোটি ডলার ফেরত দেন। এই অর্থ ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা আছে। কিম অং বনাম ফিলিপাইন সরকারের মামলার শুনানি শেষে রিজিওনাল ট্রায়াল কোর্ট এই অর্থ বাংলাদেশকে ফেরত দেয়ার নির্দেশ দেন বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী মুখপাত্র।
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ চুরির ঘটনায় ফিলিপাইনের সিনেট কমিটিতে দীর্ঘ শুনানি হয়। পরে এটি আদালতে গড়ায়।
এর আগে ফিলিপাইনের বিচার বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী ওই পরিমাণ অর্থের মালিকানা দাবি করে সে দেশের আদালতে একটি হলফনামা দাখিল করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর পর এ নিয়ে শুনানি চলছিল।
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়ায় সেদেশের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনকে (আরসিবিসি) ১০০ কোটি পেসো (স্থানীয় মুদ্রা, যা ২ কোটি ১০ লাখ ডলারের সমান) জরিমানাও করে ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আরসিবিসিও অর্থ চুরির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ মেনে নিয়ে জরিমানার অর্থ ধাপে ধাপে পরিশোধ করতেও রাজি হয়েছে।
ফিলাপাইনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত বিষয়টি সার্বক্ষণিক তদারকি করছিল। এছাড়া রিজার্ভ চুরি অর্থ ফেরত পাওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি টিমও ফিলিপাইনে অবস্থান করছে দীর্ঘ দিন ধরে।
এর মধ্যে শ্রীলংকায় যাওয়া দুই কোটি ডলার ফেরত পাওয়া গেলেও ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনের( আরসিবিসি) মাধ্যমে এই অর্থ ক্যাসিনোর হয়ে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পরে। এ নেয় তীব্র সমালোচনার মুখে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আতিউর রহমান এবং দুই ডেপুটি গভর্নরকে সরে যেতে হয়।
এই ঘটনায় সাবেক গভর্নর ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে সরকার গঠিত তদন্ত কমিটি এরই মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে এই প্রতিবেদন প্রকাশ হবে। পাশাপাশি পুলিশের অপরাধ তদন্ত সংস্থা-সিআইডির আরেকটি তদন্ত চলছে।