লঞ্চে সব কটি ডেক ইতিমধ্যে বোঝাই হয়ে গেছে । তার পরও জীবনের ঝুঁকি হুড়োহুড়ি করে লঞ্চে উঠছে ঈদ শেষে কর্মস্থল অভিমুখী মানুষ। ধারণক্ষমতার দু-তিন গুণ বেশি যাত্রী নিয়ে চাঁদপুর থেকে ঢাকা অভিমুখে ছেড়ে যাচ্ছে লঞ্চগুলো।

শনিবার চাঁদপুর লঞ্চঘাটে এমন চিত্রই দেখা গেছে। লঞ্চে জায়গা না পেয়ে অনেক যাত্রীকে টার্মিনালে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।

ঈদ উপলক্ষে চাঁদপুর নৌ-টার্মিনালের জন্য জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত থাকলেও অতিরিক্ত যাত্রী বহনের দায়ে কোনো ব্যবস্থা নেয়ার কাউকে দেখা যায়নি।

যাত্রীদের অধিক চাপ থাকায় লঞ্চ মালিকরা ঢাকা-চাঁদপুর, চাঁদপুর-নারায়ণগঞ্জ, মতলব-নারায়ণগঞ্জ-মুন্সিগঞ্জ-কাঠপট্টি নৌ-রুটে ফিটনেসবিহীন লঞ্চ নামিয়েছে। এগুলো অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে প্রতিদিন যাতায়াত করছে। এ ছাড়া এ রুটে যেসব লঞ্চকে নৌ-অধিদপ্তর ত্রুটিপূর্ণ বলে যাতায়াত নিষিদ্ধ করে দিয়েছিল, সেসব লঞ্চ তড়িঘড়ি মেরামত ও রং করে ঈদ উপলক্ষে যাত্রী পারাপারের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

এ রুটে চলাচলকারী এমভি মিরাজ ১-২, এমভি রিফাত-১,  এমভি মহারাজসহ চাঁদপুর-নারায়ণগঞ্জে যাতায়াতকারী ছোট লঞ্চ ও মতলব-ঢাকা রুƒটে যাতায়াতকারী অধিকাংশ লঞ্চই ত্রুটিপূর্ণ বলে স্বীকার  করেছেন সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তর পরিদর্শক মো. জহিরুল ইসলাম।

অতিরিক্ত যাত্রী বহনের কারণে যেকোনো মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কাও বিরাজ করছে।

পরিবারের সঙ্গে ঈদুল আজহা উদযাপন শেষে কর্মমুখী মানুষ তাদের কাজে যোগ দিতে গন্তব্যস্থলে যাওয়ার জন্য শনিবার থেকে লঞ্চঘাটে আসতে থাকে। শরীয়তপুর জেলার চরাঞ্চল, রায়পুর, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, ফেনীসহ আশপাশের জেলার বেশির ভাগ মানুষ লঞ্চে যাতায়াত করে। এই সুযোগে লঞ্চ কর্তৃপক্ষ তাদের ইচ্ছেমতো যাত্রী নিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রা করছে।

হাজীগঞ্জ থেকে আসা যাত্রী জেসমিন আক্তার জানান, রবিবার অফিস খোলা, তাকে কাজে যোগ দিতে হবে। বাসের টিকেট পাননি। কোনো উপায় না পেয়ে লঞ্চে দাঁড়িয়ে রওয়ানা হয়েছে। যেকোনোভাবে তাকে ঢাকায় পৌঁছাতে হবে।

অন্য এক যাত্রী কাপড়ের দোকানের কর্মচারী শাহজাহান জানান, সকাল থেকেই লঞ্চঘাটে ভিড়। টার্মিনালে আসতেই লঞ্চ বোঝাই হয়ে যায় যাত্রীতে। কয়েক গুণ যাত্রী নিয়ে নির্দিষ্ট সময়ের আগে ঢাকার উদ্দেশে  ছেড়ে যাচ্ছে লঞ্চ।

এমভি রফ রফ-এর যাত্রী মাহমুদুল হাসান ও সুমন জানান, লঞ্চের ২য় ও ৩য় তলায় কোনো জায়গা নেই। তাই ছাদে দাঁড়িয়ে রওয়ানা হয়েছেন তারা। কারণ রবিবার তাদের কাজে যোগ দিতে হবে।

লঞ্চ মালিক প্রতিনিধি বিপ্লব সরকার জানান, ঈদের পরে তেমন ভিড় ছিল না। গতকাল হঠাৎ যাত্রীসংখ্যা বেড়ে গেছে। যাত্রীদের না ওঠার জন্য নিষেধ করলেও তারা জোর করে লঞ্চে উঠছে। এই কারণে অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে লঞ্চগুলো ছেড়ে যাচ্ছে।

চাঁদপুর বন্দর ও পরিবহন কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ‘অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে লঞ্চ যেন না ছাড়ে সেজন্য আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত। সকাল থেকেই লঞ্চঘাটে পুলিশ, কোস্টগার্ডসহ সবাই কাজ করে যাচ্ছে।’ তবে যাত্রীদের নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়ে উঠছে না বলে জানান তিনি।

এ ব্যাপারে সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের পরিবহন পরিদর্শক মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, জনবলের সংকটের কারণে বিভিন্ন ত্রুটিপূর্ণ (ফিটনেস বিহীন) যানবাহন ঠিকমতো পরিদর্শন করা যাচ্ছে না। ফলে এ রুটে ফিটনেসবিহীন কিছু নৌযান যাতায়াত করছে।

Share Now
December 2024
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031