বাংলাদেশের একজন শক্তিশালী অভিনেতা। ফখরুল হাসান বৈরাগী। দেশের মানুষের কাছে তিনি অত্যন্ত জনপ্রিয় একজন মানুষ। টিভি অনুষ্ঠান ইত্যাদির মাধ্যমেও তিনি তুমুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। তবে তার অভিনয় দক্ষতা ও স্বভাবসূলভ রসবোধ তার এই জনপ্রিয়তার প্রধানতম কারণ। বর্তমানে এই অভিনেতাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এই মর্মে ফেসবুকে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এর গ্রুপ পেজ’য়ে একটি বিজ্ঞাপন শেয়ার করা হয়েছে বৈরাগীর ছেলের মর্মে।
ফেসবুকের স্ট্যাটাস নোটটি নিচে হুবহু তুলে ধরা হলো:
-জনপ্রিয় টিভি অভিনেতা, বিশিষ্ট পরিচালক, জাতীয় বেতার শিল্পী, বিখ্যাত নাট্যকার, ফখরুল হাসান বৈরাগী – আমার বাবা। গত ৭ই আগস্ট, ২০১৬ থেকে তিনি নিখোঁজ। বাসার দারোয়ানের কথানুযায়ী তিনি সেইদিন আনুমানিক ৯:২০ মিনিটে আমাকে কলেজে নামিয়ে আসার পর বাসায় গাড়িটি পার্ক করে দারোয়ানের কাছে চাবিটি দিয়ে বেড়িয়ে যায় – এই বলে “তোমার খালাম্মাকে চাবিটা দিয়ে দিও”। তিনি একই কাপড়ে বেড়িয়েছিলেন। তাঁর পরনে ছিল সবুজ ফতুয়া ও কালো প্যান্ট। এই ঘটনার পর অতি সত্ত্বর পুলিশ থানায় জি.ডি. করা হয়। পুলিশ এই ব্যাপারে কর্মতৎপরতার অভাব ও অবহেলা দেখালে র্যাবের কাছে আবেদন করা হয়। র্যাবের কাছে যথেষ্ট তথ্য প্রদান সত্ত্বেও আজ পর্যন্ত কোনো খবর পাওয়া যায়নি। আমরা নিজেরাও জায়গায় জায়গায় খোঁজ-খবর নিয়েছি – মসজিদে, দোকান-পাটে, রাস্তা-ঘাটে, আত্মীয়-স্বজনের বাসায়, তাঁর বন্ধু-বান্ধবের কাছে, সহকর্মীদের কাছে কিন্তু তবুও কোনো খোঁজ মেলেনি।
নিখোঁজ হবার পরের দিনই আমার মা ও আমার বোন হাতিরপুলে আমার দাদুর বাড়িতে খোঁজ নিতে যায়, যেহেতু আব্বু দাদুকে দেখবার ও সেখানকার কিছু বকেয়া কাজকর্ম সাড়বার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিল। তবে সেখানে যাবার পর সাহায্যের বদলে বড় ও ছোট ফুফু আমার মা ও বোনকে মারধোর, কটূক্তি, বকাঝকা ও অত্যাচার করে বেড় করে দেয়। উপরন্তু ওই দিনই আমাদের পারিবারিক ডেভলাপারের এক লোকের সাথে এই ব্যাপারে আলাপ হলে তিনি সাহায্য করতে ইচ্ছুক হলেও পরবর্তীতে তিনি এড়িয়ে যান। তাঁর কথানুযায়ী আব্বু তাকে ফোন দিয়েছে তবে তার কাছে সেই কলটির নম্বর চাওয়া হলে তিনি নম্বরটি হারানোর বাহানা ধরে এড়িয়ে যান। এই দুই ঘটনাই একই সাথে কৌতূহলোদ্দীপক ও সন্দেহজনক।
অতএব, আমরা নিরুপায় হয়ে আজ আপনাদের সাহায্য চাচ্ছি। যদি তাকে ৭ই আগস্ট, ২০১৬ এর পর কোথাও দেখে থাকেন – দোকানে, রাস্তায়, গাড়িতে, রিক্সায় – যেখানেই হোক, যে কারও সাথেই হোক, যে অবস্থাতেই হোক – দয়া করে প্রদত্ত ফোন নম্বরে আমাদের জানাবেন। আমাদের আশার পথ ফুরিয়ে যাচ্ছে, আমরা আমাদের এই অসহায় মুহূর্তে আপনাদের সাহায্যে আমরা অত্যন্ত ঋণি থাকবো। আমার বাবা, আমার মার জীবনসঙ্গীকে ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করুন।
যোগাযোগ: ০১৯৬২৭৫৯৯৯৩
দয়া করে এই ব্যপারটিকে কেউ হাসি-ঠাট্টার পাত্র বানাবেন না। কোনো মিথ্যা তথ্য, স্প্যাম, কটূক্তি ইত্যাদি করে আমাদের হয়রানি করবেন না। আমাদের সাথে যোগাযোগের নম্বর এই একটিই – অন্য কারও প্রদত্ত নম্বরে বা অন্য কোনো নম্বরে যোগাযোগ করবেন না। এই ব্যপারে কেউ আপনাদের সাথে যোগাযোগ করলে তা আমাদের জানাবেন এবং তার/তাদের কথায় পরবেন না।
এই পোস্টটি আপনাদের বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন – সবার কাছে শেয়ার করার জন্য বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি। -Shamonto Hasan Easha
স্ট্যাটাসটি দেখে যোগাযোগ করলে বৈরাগীর স্ত্রী রাজিয়া হাসান কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘আমাদের ২৯ বছরের সংসারে তিনি আমাদের ছেড়ে কখনো ঈদ করেননি। এবার তিনি ছিলেন না, আমরা কোন রান্না করিনি। আমার শ্বশুড় বাড়ি থেকেও কোন খোঁজ নেয়নি আমাদের। উনি কোথায় আছেন কার সঙ্গে আছেন আমরা শুধু এতটুকুই জানতে চাই। অথবা আমাদের হজ্জে যাওয়ার কথা ছিল, তিনি হজ্জে চলে গেলেন কিনা তাও ভাবছি। তাই আমরা মিডিয়ায় জানানোর অপেক্ষা করছি। হজ্জের লোকগুলো আসলে তারপর দেখে জানাবো। আমি সেই পর্যন্ত অপেক্ষা করতে চাই। উনি সম্মানিত মানুষ, উনার বিরুদ্ধে খারাপ কিছু লিখবেন না।’