বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু-কিশোরদের জন্য প্রয়োজন বিশেষ শিক্ষা, প্রশিক্ষণ। আর উপযুক্ত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ পেলে তারাও হয়ে উঠতে পারে সমাজের আর দশজন মানুষের মতোই সৃষ্টিশীল ও কর্মক্ষম। প্রয়াস বিশেষায়িত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমন শিশু-কিশোরদের প্রতিবন্ধিতার বাধা জয়ের অনন্য একটি পাঠশালায় পরিণত হয়েছে। আস্থা আর নির্ভরতায় বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ নিয়ে গড়ে তুলছে এ প্রতিষ্ঠানটি। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পরিচালিত এই প্রতিষ্ঠানটিকে এখন বিশেষ শিশুদের জন্য শেষ আশ্রয়স্থলই বলা চলে। ‘বিশেষ শিশু, বিশেষ অধিকার’-এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে পরিচালিত ‘প্রয়াস’-এর কার্যক্রম পরিবার, আত্মীয়স্বজন ও সমাজের কাছে বোঝা হয়ে যাওয়া বিশেষ শিশুদের স্বাভাবিক জীবন গড়ে তুলতে সচেষ্ট।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান মতে, বিশ্বের জনসংখ্যার ১০-১৫% মানুষ কোনো না কোনোভাবে প্রতিবন্ধিতার শিকার। আর বিশ্বব্যাংকের সমীক্ষা অনুযায়ী, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মাত্র ৪ ভাগ শিশু স্কুলে পড়ালেখার সুযোগ পায়। আদমশুমারি ২০১১ অনুসারে বাংলাদেশে প্রায় ২ কোটি মানুষ প্রতিবন্ধিতার শিকার। ইউনেস্কোর গবেষণায় দেখা গেছে, শতকরা ৪ জন প্রতিবন্ধী শিশু স্কুলে যাওয়ার উপযোগী হলেও তাদের পক্ষে স্কুলে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অটিস্টিকদের চিকিৎসা সেবা ও তাদের পুনর্বাসনে কাজ করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়ে আন্তর্জাতিক শিশু মনোবিজ্ঞানী সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। সায়মা ওয়াজেদ অটিজমবিষয়ক বাংলাদেশের জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। তার সার্বিক সহযোগিতায় অটিস্টিক শিশুদের পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা সেবা ও পুনর্বাসন কেন্দ্র গড়ে ওঠেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে।
২০০৬ সালের ১৮ই জুলাই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পৃষ্ঠপোষকতায় অটিস্টিক বা প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষাদানের উদ্দেশ্যে ‘সেনাসহায়ক স্কুল’ নামে যাত্রা শুরু হয়। এই স্কুলে প্রাথমিক পর্যায়ে সেনা পরিবারের মাত্র ২২ জন শিশু-কিশোর নিয়ে একটি ভাড়া বাড়িতে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। পরে ২০০৮ সালের ২১শে নভেম্বর ঢাকা সেনানিবাসে ৫.৪৪ একর জায়গায় প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ভবন তৈরির জন্য ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। প্রতিষ্ঠানটি নিজস্ব অর্থায়নে মাস্টার প্ল্যানের অংশবিশেষ বাস্তবায়ন করতে সমর্থ হয়। ২০০৯ সাল থেকে প্রয়াসে বেসামরিক পরিবার থেকেও ছাত্রছাত্রী ভর্তি করা হচ্ছে। এখানে বিপুলসংখ্যক বিশেষ শিশু শিক্ষাগ্রহণ করে সমাজের মূলস্রোতধারায় সম্পৃক্ত হওয়ার পথে এগিয়ে যাচ্ছে। একই সঙ্গে ‘সেনাসহায়ক স্কুলের’ নতুন নামকরণ করা হয় ‘প্রয়াস’। বিশেষায়িত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান একটি অলাভজনক সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে ভর্তি শিক্ষার্থীদের পঞ্চাশ শতাংশেরও বেশি আসছে বেসামরিক পরিবার থেকে। সুন্দর ও মনোরম পরিবেশে প্রয়াস অটিস্টিক শিশুদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছে। শুধু ঢাকা সেনানিবাসে নয় দেশব্যাপী এর বিস্তার ঘটছে। রংপুর, চট্টগ্রাম, যশোর, কুমিল্লা, সাভার, ঘাটাইল, সিলেট, রাজশাহী, রামু ও বগুড়া সেনানিবাসে প্রয়াসের শাখা সম্প্রসারিত হয়েছে। এসব শাখায় একযোগে এই কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। প্রয়াসের প্রধান সেনাবাহিনী প্রধান আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হকের সহধর্মিণী সোমা হক। ঢাকায় প্রয়াসের কেন্দ্রীয় শাখার পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এএসএম মাহমুদ হাসান, পিএসসি। ঢাকা প্রয়াসের অধ্যক্ষ ও নির্বাহী পরিচালকের দায়িত্বে রয়েছেন কর্নেল মো. শহীদুল আলম এসজিপি।
প্রয়াসের বিশেষায়িত শিক্ষা কার্যক্রম সাধারণ স্কুল থেকে কিছুটা ভিন্ন। রয়েছে ৫টি বিশেষায়িত কার্যক্রম। কার্যক্রমগুলোর প্রথমটি হলো- বিশেষায়িত ইন্টারভেনশন ক্লিনিক। এই কার্যক্রমের অধীনে রয়েছে মেডিকেল অ্যাসেসমেন্ট অ্যান্ড কেয়ার, নিউরোলজি অ্যাসেসমেন্ট, অডিওলজি পরীক্ষা, মনোবৈজ্ঞানিক টেস্ট ও ইইজি পরীক্ষা। দ্বিতীয়টি হলো সহায়ক থেরাপি সেবা। এই কার্যক্রমের অধীনে রয়েছে- স্পিচ ও ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপি, সেনসরি ইন্ট্রিগেশন থেরাপি, ফিজিও থেরাপি, সুইমিং ও হাইড্রোথেরাপি, অকুপেশনাল থেরাপি, আউটডোর, কাউন্সেলিং, বিহেভিয়ার থেরাপি ও ইয়োগা।
প্রয়াসের মূল কার্যক্রমের অধীনে রয়েছে- প্রাক-শৈশবকালীন বিকাশমূলক কার্যক্রম (ইসিডিপি), বয়স্ক শিক্ষা ও বিনোদনমূলক কার্যক্রম, অটিজম বিদ্যালয়, বুদ্ধিপ্রতিবন্ধিতা বিদ্যালয়, শ্রবণ প্রতিবন্ধিতা বিদ্যালয় এবং শারীরিক ও বহুবিধ প্রতিবন্ধিতা বিদ্যালয়।
এছাড়া রয়েছে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের নিয়মিত বিদ্যালয় (বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যম) প্রত্যয় ইনক্লুসিভ ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল (প্লে গ্রুপ থেকে ও’ লেভেল পর্যন্ত) এবং বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ বিদ্যালয়।
প্রয়াস স্পেশাল এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটে দক্ষ থেরাপিস্ট ও বিশেষ শিক্ষক-শিক্ষিকা তৈরির জন্য বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের অধিভুক্তি নিয়ে চার বছর মেয়াদি অনার্স প্রোগ্রাম, মাস্টার্স পোস্ট গ্রাজুয়েশন ও সার্টিফিকেট কোর্স চালু রয়েছে। বিশেষায়িত উচ্চশিক্ষা কার্যক্রম সম্পর্কে নির্বাহী পরিচালক ও অধ্যক্ষ কর্নেল মো. শহীদুল আলম এসজিপি বলেন, প্রয়াস ইনস্টিটিউট অব স্পেশাল এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চে বেশ কয়েকটি নতুন কারিকুলাম চালু করা হয়েছে, যা আগে আমাদের দেশে অপ্রতুল ছিল। এটা চালু করতে আমাদের বেশ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য আমাদের প্রতিষ্ঠান থেকে উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন করে এ দেশের বিশেষ শিক্ষা ক্ষেত্রের পেশাজীবীদের ঘাটতি পূরণ করা। তিনি বলেন, প্রয়াস থেকে অনেক শিক্ষার্থী মূলধারার প্রতিষ্ঠানে যোগ দিয়েছে। কিন্তু, ওই স্কুলগুলো অনেক সময় এই সব শিক্ষার্থীকে মানিয়ে নিতে পারেন না। আমরা চাই সাধারণ স্কুলগুলোর মধ্যেও সচেতনতা তৈরি হোক। এছাড়া, আমরা সব শিশুকে প্রয়াসের ক্যাম্পাসে সব ধরনের সেবা দিতে চাই।
নির্বাহী পরিচালক ও অধ্যক্ষ শহীদুল আলম বলেন, অনেকেই মনে করেন প্রয়াসে শুধু সেনাপরিবারের ছেলে-মেয়েরাই ভর্তি হতে পারবে যা সঠিক নয়। এখানে সবাই ভর্তি হতে পারে তবে আসন স্বল্পতা আছে এবং যারা ভর্তি হতে পারে না তাদের জন্য আমাদের আউটডোর সেবা চালু আছে।
ভর্তি প্রক্রিয়া: প্রয়াসের ইন্টারভেনশন ক্লিনিকে মাল্টিডিসিপ্লিনারি টিমের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের অ্যাসেসমেন্ট করা হয়। শিশুদের প্রতিবন্ধিতা শনাক্তকরণের প্রয়োজনীয় সকল ধরনের পেশাজীবী শিশু বিশেষজ্ঞ ও নিউরোলজিস্ট, মনোবিজ্ঞানী, সাইক্রিয়াটিস্ট, অকুপেশনাল ও ফিজিও থেরাপিস্ট, স্পীচ ও ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপিস্টসহ বিশেষ শিক্ষকের সমন্বিত টিম শিক্ষার্থীর সক্ষমতা ও দুর্বলতা এবং চাহিদাগুলো নির্ণয় করেন। তার জন্য উপযোগী চিকিৎসা ও প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা তৈরি করেন। সে অনুযায়ী শিশুটির জন্য চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম নির্ধারণ করা হয়। কিছুদিন নিবিড় পর্যবেক্ষণের পর ‘একক শিক্ষা পরিকল্পনা’ (আইইপি) তৈরি করে তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয় ও স্কুল কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বিদ্যালয় কার্যক্রমে রয়েছে ফাংশনাল একাডেমিক দৈনন্দিন কার্যক্রম প্রশিক্ষণ ও পাশাপাশি নিয়মিতভাবে সহশিক্ষা কার্যক্রম। যেমন- গান, নাচ, ছবি আঁকা, সাঁতার প্রভৃতি। বর্তমানে এখানে ছাত্রছাত্রী ৪৯১ জন। আর থেরাপিস্ট, ডাক্তার ও শিক্ষকসহ মোট স্টাফ ২৮৫। এখানে দুই থেকে ২২ বছর বয়সী যেকোনো ধরনের বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে স্বাস্থ্যসেবা, কর্মমুখী শিক্ষা এবং বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের জন নানামুখী কার্যক্রম।
উপাধ্যক্ষ কাজী আফরোজা সুলতানা বলেন, এখানে শিক্ষার্থীদের জন্য মাথাপিছু খরচ হয় ১৫ হাজার টাকার মতো। এছাড়া সরকারের কাছ থেকে যে সহায়তা পাই তা দিয়ে প্রয়াসের শিক্ষকদের বেতনের আংশিক ব্যয় মেটাতে তা খরচ হয়। শিক্ষার্থীদের জন্য প্রচুর ভর্তুকি দিতে হয়। তাই দেশের বিত্তবানদের প্রতি আহ্বান ‘প্রয়াসে’ দীর্ঘ মেয়াদি সহায়তা করুন। অনুদানের শতভাগ ব্যবহারের নিশ্চয়তা প্রয়াসে রয়েছে। দেশের অবহেলিত জনগোষ্ঠীকে দেশের অগ্রযাত্রার উন্নয়নে এগিয়ে দিন। ছোট ও বড় যে কোনো অনুদান প্রয়াস শতভাগ বাস্তবায়ন করে থাকে। তিনি বলেন, দেশে অনেক ছোট ছোট প্রতিষ্ঠান আছে প্রতিবন্ধীদের। কিন্তু সেখানে ভালো প্রশিক্ষিত শিক্ষক নেই। কিন্তু আমরা প্রয়াসে দক্ষ প্রশিক্ষক তৈরি করছি। সেভাবেই আন্তর্জাতিক মানের কারিকুলাম তৈরি করা হয়েছে। মোট কথা প্রয়াস শুধু একক একটি প্রতিষ্ঠান নয়, এটি একটি বিশেষায়িত সেবা, চিকিৎসা, থেরাপি, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণমূলক প্রতিষ্ঠান যেখানে সমন্বিত সেবা দেয়া হয়। আমাদের চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে একজন বিশেষ শিশুকে সামগ্রিক সেবা দিতে হলে প্রয়োজন বহুমুখী, আধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জাম। এগুলোর সংযোজনে প্রয়োজন আর্থিক সচ্ছলতা। প্রতি বছর আর্থিক টানাপড়েন ও ঘাটতি থেকেই যায়। নির্বিঘ্নে কার্যক্রমকে এগিয়ে নিতে সকলকে উদ্যোগী হয়ে এই প্রতিষ্ঠানকে সহযোগিতার জন্য অনুরোধ করে কাজী আফরোজা বলেন, এখানে যারা আর্থিক অনুদান দিতে চান, তারা যেন দীর্ঘ মেয়াদে সহায়তা প্রদান করেন। তাই একবার আর্থিক অনুদান নয় বরং ক্রমান্বিতভাবে সহায়তা দিলে এ ধরনের প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া তথা সেবার পরিধিকে আরো বিস্তৃত করা সম্ভব হবে।
খেলাধুলা ও সংস্কৃতি: সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড ও খেলাধুলায় প্রয়াসের শিক্ষার্থীরা এরই মধ্যে দেশ-বিদেশে সুনাম অর্জন করেছে। ২০০৭ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত এ যাবৎ স্পেশাল অলিম্পিকসে অংশ নিয়ে প্রয়াসের শিক্ষার্থীরা ২৬টি স্বর্ণ, ১৫টি রৌপ্য ও ৪টি ব্রোঞ্জপদক অর্জন করে বিশ্বপ্রাঙ্গণে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছেন। জাতীয় সব ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডেও নিয়মিত অংশ নিয়ে থাকে প্রয়াসের শিক্ষার্থীরা। প্রয়াসে কর্মরত শিক্ষকদের কাজের দক্ষতা উন্নয়নে নিয়মিত দেশ ও বিদেশের প্রশিক্ষক দ্বারা প্রশিক্ষণ পরিচালিত হয়। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের সম্পর্কে জানার জন্য দেশ-বিদেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ বিভিন্ন সময় প্রয়াস পরিদর্শন করে গেছেন। প্রয়াস প্রমাণ করেছে সুষ্ঠু পরিবেশ ও সহায়তা নিশ্চিত করলে সবার মতো মননশীল কাজে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুরাও প্রতিভার স্বাক্ষর রাখতে পারে। নির্বাহী পরিচালক ও অধ্যক্ষ শহীদুল আলম বলেন, এবার ঢাকা শহরের সকল স্কুলসমূহের জন্য আয়োজিত উন্মুক্ত টেবিল টেনিস প্রতিযোগিতায় প্রয়াস চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। শারীরিক/মানসিক/স্নায়ুবিক দুর্বলতাজনিত অক্ষমতাকে পাশ কাটিয়ে প্রয়াসের শিক্ষার্থীরা অন্যান্য সাধারণ স্কুলের শারীরিকভাবে সুসক্ষম প্রতিযোগীদের পরাজিত করে যে চ্যাম্পিয়ন ট্রফি অর্জন করেছে তা এক কথায় নজিরবিহীন।
প্রয়াস-এর ছাত্রছাত্রীরা তথ্য-প্রযুক্তিতেও অনেক এগিয়ে। আইসিটি মন্ত্রণালয়ের অধীনে কম্পিউটার প্রতিযোগিতায় প্রয়াস সর্বাধিক সাফল্য অর্জন করেছে। এছাড়া, আগামীতে দেশের বাইরে (গণপ্রজাতন্ত্রী চীন) অনুষ্ঠিতব্য আইসিটি প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে যাচ্ছে প্রয়াস-এর শিক্ষার্থীরা। এটিও প্রয়াসের বিশাল অর্জন।
কর্মসংস্থান: শিক্ষার্থীদের মূলধারার কর্মসংস্থানের জন্যও কাজ করছে প্রয়াস। প্রাপ্তবয়স্ক শিক্ষার্থীদের সমাজে কর্মক্ষম করে তুলতে প্রয়াসে রয়েছে বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ ও আশ্রিত কর্মশালা বিভাগ। নির্বাহী পরিচালক ও অধ্যক্ষ শহীদুল আলম বলেন, জাতি গঠনে সরকারের পাশাপাশি সমাজের সম্পদশালী, সমাজসেবক, সচেতন ও দায়িত্বানুভূতি সম্পন্ন মহানুভব ব্যক্তিদের অবশ্যই এ ধরনের শিশুদের উন্নয়নের জন্য সহযোগিতা করা এবং তাদের পাশে দাঁড়ানো উচিত। তথ্যের অভাবে অটিস্টিক শিশুরা শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ে প্রদত্ত সেবাসহ অন্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হয় প্রতিনিয়ত। এছাড়া রয়েছে সামাজিক কুসংস্কার, পারিবারিক অবহেলা, যা তাদের বিকাশের প্রধান অন্তরায়। তিনি বলেন, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিগণ এদেশেরই নাগরিক এবং তাদের অনেকের মধ্যে সুপ্ত প্রতিভা রয়েছে। কাজেই প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উন্নয়নে সম্পৃক্ত করতে না পারলে কখনো দেশ অগ্রসর হতে পারবে না। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের শিক্ষা ও কর্মসংস্থান নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে তাদের ও দেশের উন্নয়ন সম্ভব। ভবিষ্যৎ কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিতে ওই শিশুদের দক্ষতা বৃদ্ধির ব্যবস্থা করতে হবে।
২০১৩ সালে প্রয়াসকে ১ কোটি টাকা অনুদানকারী প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো গ্রুপের রিয়েল এস্টেট, ফিশারিজ ও ট্রেডিং বিভাগের সিইও মেজর পারভেজ পিএসসি (অব.) বলেন, প্রতিবন্ধীরা সমাজের অবহেলিত অংশ নয়। তাদেরকে সমাজের মূলধারায় আনার জন্য কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছে প্রয়াস। সেই শ্রমকে সফল করার জন্য সম্প্রতি বগুড়ার প্রয়াস শাখায় একটি বড় মাইক্রোবাস দেয়া হয়েছে বেক্সিমকো গ্রুপের পক্ষ থেকে। বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমানের ছেলে শায়ান এফ রহমান ও তার স্ত্রী বগুড়া প্রয়াস শাখা পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। সালমান এফ রহমান নিজেও প্রয়াসের ঢাকা ক্যাম্পাস পরিদর্শন করেছেন। প্রয়াসের কর্মকাণ্ডে আগামীতেও সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলে জানান মেজর পারভেজ।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা: প্রয়াস এক জায়গায়ই থেমে নেই, প্রতিনিয়ত এর কার্যক্রম বিস্তৃত করতে নেয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ। প্রতিষ্ঠানটিকে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু-কিশোরদের কল্যাণে একটি মডেল হিসেবে গড়ে তোলার জন্য চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারকরা। প্রয়াস প্রতিষ্ঠানটিতে ৪০২টি শ্রেণিকক্ষসহ ৪ তলাবিশিষ্ট ২টি ও ৬ তলাবিশিষ্ট একটি একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবন রয়েছে। আছে ৭৫০ আসনবিশিষ্ট একটি মাল্টিপারপাস হল ও ১টি সম্মেলন কক্ষ। ১টি শিশুতোষ গ্রন্থাগার এবং বিশেষ শিক্ষাবিষয়ক রিসোর্চ বই সংবলিত সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার। ফিজিও থেরাপির ও হাইড্রোথেরাপির জন্য হাইড্রোথেরাপি পুলসহ রয়েছে ১টি সুইমিং পুল। শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য রয়েছে ১৪তলা ভবনের ভিত্তির উপর ৬ষ্ঠ তলা বিশিষ্ট একটি আবাসিক ভবন। খেলাধুলা ও প্রাকৃতিক পরিবেশে শিক্ষার্থীদের বিকাশের জন্য রয়েছে বিস্তৃত সবুজ মাঠ, বাগান, নয়নাভিরাম ফোয়ারা এবং প্রয়োজনীয় আসবাবপত্রসহ শিক্ষা উপকরণ দিয়ে সাজানো শ্রেণিকক্ষ। চিকিৎসা ও থেরাপি দেয়ার জন্য ডাক্তারি, থেরাপিউটিক, বিনোদনমূলক বিভিন্ন সামগ্রী সংবলিত ইন্টারভেশন ক্লিনিক, সেন্সরি ইন্টিগ্রেশনরুম, ফিজিও ও অকুপেশনাল থেরাপি রুম। দক্ষ পেশাজীবী, থেরাপিস্ট, শিক্ষক ও অভিভাবকদের প্রশিক্ষণের জন্য রয়েছে একটি ট্রেনিং ও রিসার্চ ইনস্টিটিউট। এখনও আরো অত্যাধুনিক ব্যবস্থাপনা সংযোজন করা প্রয়োজন যার মধ্যে রয়েছে- সেনসরি থেরাপির জন্য সেনসরি গার্ডেন। তথ্য সংরক্ষণ ও প্রতিবন্ধিতাবিষয়ক অনলাইন তথ্য সেবা প্রদান। বাংলায় প্রয়োজনীয় বই অনুবাদ ও মুদ্রণ। ক্যাম্পাস নেটওয়ার্কিং। অর্থটিক ওয়ার্কশপ। শহীদ মিনার নির্মাণ। এএলএলপি ও ভোকেশনাল স্কুলের জন্য পৃথক ভবণ নির্মাণ। একাডেমিক ভবনের ৫ম ও ৬ষ্ঠ তলা সম্প্রসারণ। ইনক্লুসিভ ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলটিকে সম্প্রসারণের জন্য আলাদা ভবন নির্মাণ। অভিভাবক অপেক্ষাগার হিসেবে ২য় তলা ফাউন্ডেশনসহ ১তলা দালান নির্মাণ। ৬ তলা শিক্ষক আবাসিক ভবনের ৭ম হতে ১৪তম তলা পর্যন্ত সম্প্রসারণ।
অধ্যক্ষ কর্নেল শহীদুল আলম জানান, শুধুমাত্র প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্যই নয় দেশে শিক্ষার্থী, শিক্ষকদের প্রশিক্ষিত করার জন্য আদর্শ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হলো ‘প্রয়াস’। এ প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে শিক্ষার্থী সাধারণ স্কুলে পড়াশোনার উপযোগী হয়েছে। তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠান প্রধান হিসেবে জানাচ্ছি প্রয়াসের কার্যক্রমকে এগিয়ে নিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ও সহায়তাকারী সকল ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান সবার কাছে কৃতজ্ঞ প্রয়াস। এখানে সবার অনুদান শতভাগ ব্যবহার নিশ্চিত করা হয়। প্রয়াসে যেসব শিক্ষার্থী থাকে তাদের প্রত্যেকেই কিছু একটা করতে শিখে। তিনি বলেন, একজন যদি কিছুই করতে না পারে, কমপক্ষে ফটোকপি করতে পারলেও সেই শিক্ষার্থীকে ঐ কাজে কর্মক্ষম করে গড়ে তোলা হয়।
M | T | W | T | F | S | S |
---|---|---|---|---|---|---|
1 | ||||||
2 | 3 | 4 | 5 | 6 | 7 | 8 |
9 | 10 | 11 | 12 | 13 | 14 | 15 |
16 | 17 | 18 | 19 | 20 | 21 | 22 |
23 | 24 | 25 | 26 | 27 | 28 | 29 |
30 | 31 |