সুনামগঞ্জ শহর থেকে ২০ কিলেমিটারের পথ জেলার তাহিরপুর। তারপর নৌকায় করে টাংগুয়ার হাওর। একটি-দুটি নয়, প্রায় অর্ধ শ’রও বেশি নৌকায় চড়ে ‘জোৎ¯œা উৎসব’ উপভোগ করতে আসেন ভ্রমণবিলাসীরা। সবার চোখে-মুখে অন্যরকম এক আনন্দ। আর সবাই রাতের অপেক্ষায়।
সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নৌকায় করে হাওরের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করেছেন পর্যটকরা। সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে আগন্তুকদের আনন্দ বেড়ে যায় আরো একধাপ। আকাশে উঁকি দেয় রুপালি চাঁদ। জল-জোছনার টাঙ্গুয়ার হাওরের ভাসমান মঞ্চ থেকে ভেসে আসে বাউল গানের সুর।
একটি বাল্কহেড নৌকাকে মঞ্চ বানিয়ে ও তার চারপাশে ৫০টিরও বেশি নৌকায় ছিলেন পর্যটকরা। তারা জীববৈচিত্রের অনন্য জলাভূমি টাঙ্গুয়ার হাওরে জোছনা উৎসবের প্রথম রাতের আয়োজন উপভোগ করেন।
শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে হিজল-করচঘেরা হাওরের রৌয়া বিলে শুরু হয় জোছনা উৎসব। জোছনায় উজালা হাওরে সারারাত সুনামগঞ্জ অঞ্চলের বাউল মহাজনদের কালজয়ী গানগুলো পরিবেশন করেন শিল্পীরা।
অনুষ্ঠান শুরুর আগে মনোমুগ্ধকর নৃত্য পরিবেশন করেন হাওর এলাকার আদিবাসী নৃত্যশিল্পীরা। পরে শুরু হয় সংক্ষিপ্ত আলোচনাপর্ব। শিল্পী শাহানাজ বেলি, চ্যানেল আই সেরাকন্ঠ আশিকসহ স্থানীয় ও জাতীয় শিল্পীরা সুনামগঞ্জের মরমি শিল্পীদের গান কণ্ঠে তুলেন।
রাতের নীরব হাওরে ওঠে সুরের তুফান। জোছনায় উজালা হাওরে আনন্দ আবেগে মাতেন দেশ-বিদেশের পর্যটকরা। উন্মুক্ত হাওরের আকাশে উড়ানো হয় ফানুস।
এদিকে, শুক্রবার সকালে উৎসবের খবর পেয়ে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে নৌকা নিয়ে টাঙ্গুয়ার হাওরে হাজির হন অনেকে। আয়োজকদের নির্ধারিত পতাকাবাহী নৌকার সঙ্গে ওইসব নৌকাও জোছনা উৎসবের নৌ- বহরে যুক্ত হয়।
যাওয়ার পথে হিজল করচের বাগে পর্যটকরা হাওরের নীলাভ জলে অবগাহন করেন। পরে পাহাড়ঘেঁষা টেকেরঘাট খনিজ প্রকল্প ঘুরে দেখেন। সেখানকার নীলাদ্রিখ্যাত লেক দেখে আবারও টাঙ্গুয়ার হাওরে ফিরে আসেন তারা।
সন্ধ্যার আগেই নৌকাগুলো নোঙর করে জোছনা উদযাপনের জন্য প্রস্তুত করা হয়।
উপজেলা পরিষদ ও উপজেলা প্রশাসন আয়োজিত জোৎ¯œা উৎসবে সারাদেশ থেকে ব্যাপক মানুষের সমাগম ঘটায় আনন্দিত আয়োজকরা।
তারা জানান, উৎসবটি স্মরণীয় করে রাখতে এই হাওরের রুই মাছের ভাগাড় হিসেবে খ্যাত রৌয়া বিলের মধ্যখানে একটি বাল্কহেডকে মঞ্চ বানিয়ে দেশখ্যাত শিল্পী শাহনাজ বেলি, আশিকসহ স্থানীয় ও জাতীয় শিল্পীরা একের পর এক মরমী গানে মজিয়েছেন দর্শকদের।
এই অঞ্চলের হৃদয় তোলপাড় করা মরমী গানগুলো পরিবেশন করেছেন তারা।
উৎসবের ১ম দিনের আনুষ্ঠানিকতায় সুনামগঞ্জ-১ আসনের সাংসদ মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, সুনামগঞ্জ-মৌলভীবাজার সংরক্ষিত আসনের সাংসদ অ্যাডভোকেট শামছুন্নাহার বেগম (শাহানা রব্বানী), জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলাম, ডিএমপির সহকারী কমিশনার আব্দুল বাতেন, জেলা পুলিশ সুপার মো. হারুন অর রশিদ, সাবেক সাংসদ নজির হোসেন, তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল, ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম চৌধুরী, উপজেলা আ.লীগের সভাপতি আবুল হোসেন খান, সহ-সভাপতি নুরুুল আমিন, সাধারণ সম্পাদক অমল কর, ইউপি চেয়ারম্যান খসরুল আলম, আফতাব উদ্দিন, আবুল কাসেম, বিশ্বজিৎ সরকার, বুরহান উদ্দিন, তাহিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শহিদুল্লাহ, ওসি (তদন্ত) মো. হানিফসহ স্থানীয় সুধীজন উপস্থিত ছিলেন।